Home » , » বখাটেদের হাতে এবার বাবা নিহত

বখাটেদের হাতে এবার বাবা নিহত

Written By Unknown on Friday, December 3, 2010 | 3:35 PM

এবার চাঁদপুরের এক বাবাকে বখাটেরা কাঠমিস্ত্রির বাটালি দিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে। বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন বাবা। সেখানেও তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি বখাটেরা। অবশেষে এক সপ্তাহ আগে মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়ে দেন। তারই প্রতিশোধ নিতে ওরা গত মঙ্গলবার রাতে বাটালি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে মেয়ের বাবাকে।
একদিকে সরকারিভাবে প্রতিনিয়ত বখাটেদের দমনের কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে বখাটেপনা ও নৃশংসতা বেড়েই চলেছে। অনেকটা যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বখাটেদের এমন নৃশংসতায় শুধু নিহতের স্বজনরাই ব্যথিত হচ্ছেন না, পুরো সমাজেরই হৃদয় আজ ক্ষত-বিক্ষত। বখাটেরা শুধু স্কুল-কলেজের মেয়েদের উত্ত্যক্তই করছে না, তারা মেয়েকে, মেয়ের মা-বাবাকে, এমনকি মেয়ের শিক্ষককে পর্যন্ত হত্যা করে পৈশাচিক উল্লাস প্রকাশ করছে। আর পত্রপত্রিকায় কিংবা টিভি চ্যানেলে বখাটেদের এসব নৃশংসতার দৃশ্য দেখতে দেখতে সমাজের বিবেকবান প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে অবিরাম রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সভা, সেমিনার ও মানববন্ধন করে তাঁরা প্রতিনিয়ত এর প্রতিবাদও জানাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না বখাটেদের পৈশাচিক উল্লাস।
বখাটেদের দমন করা যাচ্ছে না কেন? এর জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ব্যর্থতা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা। দায়ী সামাজিক প্রতিরোধের অভাব, দায়ী নৈতিকতাহীন শিক্ষা এবং আরো অনেক কিছু। সবচেয়ে বেশি দায়ী বখাটেদের পরিবারগুলো। কোনো বখাটের মা-বাবাই তাঁদের ছেলের অপরাধপ্রবণতা সম্পর্কে সবার আগে জানতে পারেন। কিন্তু ছেলেকে শোধরানোর চেষ্টা করেন না। এমনকি বখাটেপনার শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও অন্যায় অপত্যস্নেহে সেগুলো শুনেও না শোনার ভান করেন। ছেলে যদি শোধরানোর বাইরে চলে যায়, তাহলে মা-বাবার উচিত তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করা। কিন্তু তাঁরা তা করেন না। একসময় এই বখাটেরাই খুনিতে রূপান্তরিত হয়। তাই বখাটেদের পাশাপাশি তাঁদের মা-বাবাকেও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। বখাটেদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিরোধ বিপজ্জনক বিবেচিত হলে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রকৃত তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ যদি কোনো ধরনের গাফিলতি প্রদর্শন করে, তাহলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে হবে এবং দায়ী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার অনেক সময়ই দেখা যায়, বখাটে তথা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তারা জামিনে বেরিয়ে এসে অভিযোগকারীর জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। এ কারণে বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেও অনেকে ভয় পান। অভিভাবকদের সে ভয় দূর করতে হবে।
এভাবে কোনো সমাজ চলতে পারে না। বিচার বিভাগের শীর্ষস্থানে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখবেন আশা করি। ইতিমধ্যে দ্রুত বিচার আইনে ইভ টিজিংয়ের অপরাধে কিছু অপরাধীকে স্বল্পকালীন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও বখাটেদের দৌরাত্ম্য থামছে না। তাই আইন আরো কঠোর এবং শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হওয়া দরকার। আইন মন্ত্রণালয় ও আইনপ্রণেতাদের আইনের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে আরো কঠোর আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হতে হবে। আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁরা সমাজের এ জ্বলন্ত সমস্যাটির সমাধানে আরো বেশি আন্তরিক হবেন_এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা চাই, চাঁদপুরে এক বাবাকে যারা হত্যা করেছে এবং নিকট অতীতে এ ধরনের আরো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেসব অপরাধী জড়িত রয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এবং সমাজ এক ভয়ংকর অপরাধ থেকে মুক্ত হোক।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু