Home » , , , » আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন বিএনপি উৎফুল্ল

আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন বিএনপি উৎফুল্ল

Written By Unknown on Wednesday, January 19, 2011 | 10:48 PM

দ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীরা উৎফুল্ল। প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় আশাহত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, পৌর নির্বাচনে জনগণ সরকারকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। সামনে লাল কার্ড দেখানোর অপেক্ষায়।

আওয়ামী লীগ নেতারা এই ফলাফলকে দলের জন্য সতর্কসংকেত হিসেবেই দেখছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই ফলাফলে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি। ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিএনপিরও অন্তত দুটি পৌরসভা হাতছাড়া হয়েছে বলে নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।
মেয়র পদে সিলেট বিভাগের ১৬টি পৌরসভার মধ্যে ৯টিতে বিএনপি এবং ছয়টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
বিভাগের ১৬ পৌরসভার মধ্যে সিলেটের দুটিতেই আওয়ামী লীগ, মৌলভীবাজারের পাঁচ পৌরসভার সবকটিতে বিএনপি, সুনামগঞ্জের চার পৌরসভার তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ জেলার পাঁচ পৌরসভার তিনটিতে বিএনপি, একটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এবং একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
সিলেটে কানাইঘাট এবং জকিগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন হয়। দুটিতেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। শেষ মুহূর্তে কানাইঘাট আওয়ামী লীগের কোন্দল মেটাতে উদ্যোগী হন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও জেলা সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম। এ সময় থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জমির উদ্দিন প্রধানকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। ফলে দলীয় প্রার্থী লুৎফুর রহমানের বিজয় অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এখানে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে ভুল এবং একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসেন জামায়াতের প্রার্থী মো. ওলিউল্লাহ। কানাইঘাটে এবারই প্রথম নির্বাচন হলো।
জকিগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন সোনা উল্লা বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র ইকবাল আহমদ। মাত্র ২১৫ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এখানে বিএনপির মূল প্রার্থী বদরুল হক বাদল পেয়েছেন সাকল্যে ৩৫১ ভোট।
বিএনপির তৃণমূল নেতাদের মতে, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল না করলে এ পৌরসভায় বিএনপি মেয়র পদটি লাভ করত। থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য অ্যাডভোকেট কাওসার রশীদ বাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে দল ব্যর্থ হওয়ায় এই ভরাডুবি হয়েছে। বর্তমান মেয়র ইকবাল আহমদ বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।’ দলীয় প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা না থাকা এবং ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত হিসেবে মেয়র পদ হাতছাড়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সুনামগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অবস্থা ছিল নাজুক। জেলার চারটি পৌরসভার মধ্যে একমাত্র জগন্নাথপুর পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। কারণ এখানে সাত প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের। দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হন। ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদরে কোনো প্রার্থীই দিতে পারেনি বিএনপি। ছাতকে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে। অন্যদিকে দিরাই পৌরসভায় প্রার্থী দিলেও গ্র“পিংয়ের কারণে জয়লাভ সম্ভব হয়নি।
মৌলভীবাজার জেলায় যে পাঁচ পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে তার চারটিতে আগেই বিএনপি সমর্থিত মেয়র ছিলেন। এবার পাঁচটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের মতামতকে মূল্যায়ন না করে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়ায় এই ভরাডুবি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন। প্রায় প্রতিটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। কমলগঞ্জ পৌরসভায় দলের প্রার্থী চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। এই পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জেলার সাবেক কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক নজরুল ইসলাম নাজমুল বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে যেসব প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছিল, তাঁর একজনকেও কেন্দ্র মনোনয়ন দেয়নি। ভুল প্রার্থী নির্বাচনের কারণে এমন দুরবস্থা হয়েছে।’ দলের ভরাডুবির জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার পাঁচ পৌরসভার মধ্যে তিনটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। পরপর দুবার মেয়র থাকার সুবাদে একমাত্র নবীগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাও মাত্র ১১২ ভোটের ব্যবধানে। মাধবপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান মেয়রকে পরাজিত করেছেন একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাটে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগির সুবাদে বিএনপি প্রার্থীদের জয়ের পথ সুগম হয়।
সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগে কোন্দল না থাকলেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থী নির্বাচন এবং বিএনপি আমলের উন্নয়নের বিষয়টি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। ফলে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র জি কে গউছ। স্থগিত একটি কেন্দ্র ছাড়াই বর্তমান মেয়র গউছ পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫৬০ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরীফ উল্লাহ পেয়েছেন ৮ হাজার ৬৩৪ ভোট।
সিলেট বিভাগে পৌর নির্বাচনে নিজ দলের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি ছিল। টাকার কাছে অনেক প্রার্থীই দাঁড়াতে পারেননি।’ তবে নিজেদেরও ব্যর্থতা রয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মূল্যায়ন করছি।’

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু