এই চেতনা অমর হোক- লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

Thursday, March 27, 2014

বাংলাদেশের ৪৩তম স্বাধীনতাবার্ষিকীতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রায় তিন লাখ মানুষের সমবেত হয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এতে দেশবাসীর আবেগময় অনুভূতিরও প্রকাশ ঘটেছে। ছাত্র-তরুণ-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাবেশস্থলটি হয়ে উঠেছিল নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক।
সবার হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর মুখে সেই জাতীয় সংগীতের অমর সুরলহরি। তাই মহতী এই আয়োজনের উদ্যোক্তা, বিশেষ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার এই ঘটনা জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থানকে আরও অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে লাখো প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রতি দেশবাসীর গভীর আবেগ ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। মূর্ত হয়ে উঠেছে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি তথা জাতীয় সংগীতের প্রতি আমাদের গাঢ় শ্রদ্ধাবোধ। উল্লেখ্য, কেবল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডেই নয়, দেশের সর্বত্র, যে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকেই জাতীয় সংগীত গেয়ে তাঁরা নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান যে সংগীত, তার প্রমাণ আমরা পাই ইতিহাসের পরতে পরতে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ক্ষুদিরামেরা গান গাইতে গাইতে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীতের প্রচারণা নিষিদ্ধ করলে রাজপথে গান গেয়েই এ দেশের শিল্পী, কবিসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সেই অন্যায় আদেশ রুখে দিয়েছেন।
স্বাধীনতা দিবসে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমাদের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে মেলবন্ধন তৈরি হলো, তাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে প্রতিদিনের চিন্তা-কর্মে ও দেশপ্রেমের অবিচল প্রত্যয়ে। আনুষ্ঠানিকতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে এই কালজয়ী সংগীতের মর্মবাণীকে ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যে আমাদের গভীর ভালোবাসা আছে, প্রতিটি দিবসে ও ক্ষণে আমরা তা নিজেরা যেমন তার বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট থাকব, তেমনি অন্যদেরও করব উজ্জীবিত। এই গানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে তার অঘ্রানের ভরা খেত দেখে যেমন মুখে হাসি ফোটানোর কথা বলেছেন, তেমনি তার বদনখানি মলিন হলে নয়ন জলে ভাসার বেদনাও প্রকাশ করেছেন।
জাতীয় সংগীতের মর্মবাণী হূদয়ে ধারণ করে মা-রূপ দেশের মুখে যেন সর্বদা হাসি ফুটে থাকে, যেন কখনো তার মুখ মলিন না হয়, সেই লক্ষ্যেই আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের স্বার্থকে দল ও মতের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। বিভেদ ও বৈরিতার বদলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে, সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা ছিল একাত্তরের প্রত্যয়।

নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে- পুরোনো নির্বাচনী সংস্কৃতি

যেমন আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনটিই হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের তুলনায় সংঘাত-সহিংসতা, কারচুপির অভিযোগ ও ভোটকেন্দ্র দখল—সবই ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে পরবর্তী প্রতি দফায়। চতুর্থ দফায় তো তা রীতিমতো ‘কেন্দ্র দখলের’ নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের যে ধারা বাংলাদেশে সূচনা হয়েছিল, তা সম্ভবত এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরও মুমূর্ষু হয়ে পড়ল।

চতুর্থ দফার নির্বাচনে ভোট হয়েছে ৯১টি উপজেলায়। এর মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি উপজেলায়। মারা গেছেন চারজন। সিল মেরে ভোটের বাক্স ভরা, নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনতাই ও আগুন দেওয়া, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোটকেন্দ্র দখল—যে বিষয়গুলো আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে বলে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিলাম, তার সবকিছুরই পুনরাবির্ভাব ঘটল চতুর্থ দফা নির্বাচনে। এবারের উপজেলা নির্বাচনের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি (?)! এর কৃতিত্ব (?) নির্বাচন কমিশনকে দিতেই হচ্ছে!
কোনো ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা, প্রাণহানি, ভোটকেন্দ্র দখল বা কারচুপির অভিযোগ ছাড়াই অসংখ্য নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দেশে রয়েছে। গত নির্বাচন কমিশন এর সূচনা করে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এই মৌলিক পরিবর্তনটি আনতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও শুরুতে তা বজায় রাখতে পেরেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ ধরনের নির্বাচন সম্ভব হলে বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না কেন? এই সময়কালে নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক ধরনের সরকার যেমন ক্ষমতায় ছিল, তেমনি দলীয় সরকারও ক্ষমতায় ছিল। এখন পরিস্থিতি পাল্টাল কেন?
বাংলাদেশে নির্বাচনে পুরোনো সংস্কৃতি ফিরে আসার দায় প্রথমত নির্বাচন কমিশনের। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা আগের চেয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর এই দাবির সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। ভোট যদি শান্তিপূর্ণই হবে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল কেন? এ রকম ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট কারোরই কাম্য নয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে বাধ্য। তারা যদি প্রশাসনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সেটা তাদেরই ব্যর্থতা।
এটা ঠিক যে এবারের উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দল ও তাদের সমর্থকদের শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি ক্রমাগত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু আমরা মনে করি যে একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় অবস্থান নিতে পারলে সরকার বা সরকারি দল বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে না। নির্বাচনে কেন সহিংসতা ও কারচুপি ফিরে আসছে, কেন আগাম আশঙ্কা সত্ত্বেও এসব ঠেকানো যাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। যদি সরকারের অসহযোগিতার কারণে তা হয়ে থাকে, তবে সেটাও নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট করে বলতে হবে। এটা না করতে পারলে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ বর্তমানে যে মুমূর্ষু দশার মধ্যে রয়েছে, সেটিকে আর বাঁচানো যাবে না।

পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচন করুন- অপহরণ ও প্রত্যাবর্তন

Wednesday, February 19, 2014

চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী অপহূত হওয়ার ছয় দিন পর অবশেষে ফিরে এসেছেন—এটা স্বস্তির খবর। কিন্তু তাঁকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সবার জন্য ভীষণভাবে উদ্বেগজনক।
প্রথমত বলা দরকার, মৃদুল চৌধুরী প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন—এতে আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের কোনো কৃতিত্ব নেই। সকাল ১০টায় দোকানে যাওয়ার পথে প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাঁকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় কিছু লোক, তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে। তারপর ছয় দিন ধরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে গেছে, অত্যাচার করেছে। তাঁর অপহরণের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর কোনো হদিস বের করতে পারেনি। মৃদুল চৌধুরীর অপহরণের পর তাঁর ভাই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন; অপহরণের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশ জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু র‌্যাব ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ অস্বীকার করেই দায় সারতে চেয়েছে। কারা তাঁকে অপহরণ করে কোথায় নিয়ে গিয়ে কী করল, সে বিষয়ে তদন্ত-অনুসন্ধান চালানো, তাঁকে উদ্ধার করা ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চালানো যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোরই দায়িত্ব—এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে?

স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী গত বছরের অক্টোবর মাসে ৮০ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে র‌্যাবের একজন মেজরসহ তিন ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তাঁর অপহরণের সঙ্গে সেই মামলার সম্পর্ক রয়েছে কি না, তার উত্তর পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রকাশ্য দিবালোকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে যারা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, এ দেশের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা তাঁকে জিপে করে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আনা-নেওয়া করেছে, তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে—তারা কারা? কী উদ্দেশ্যে তারা এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল আর কেনই বা অবশেষে তাঁকে ছেড়ে দিল? তারা যে র‌্যাব কিংবা পুলিশের কেউ নয়—এটুকু বলে দিলেই কি রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারীদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?

পুরো ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। সেই তাগিদ অনুভব করা উচিত সবার আগে র‌্যাব-পুলিশের, কেননা সন্দেহের তির তাদের দিকেই। এই সন্দেহ নিরসন করতে হবে আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে। ঘটনার সুষ্ঠু ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে অপহরণকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করার সামর্থ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই সামর্থ্যের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা প্রয়োজন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্য বিচ্ছিন্নভাবে এর সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকলে তার দায় পুরো সংস্থার ঘাড়ে যাতে না বর্তায়, সেটা নিশ্চিত করতে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এটা করা দরকার।

সংগঠনটি কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে?- স্বরূপে ফিরেছে ছাত্রলীগ!

Tuesday, February 4, 2014

নতুন করে ক্ষমতাসীন হয়ে বর্তমান সরকার নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনকে সম্ভবত ছাড় দিয়ে এর বাইরে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ প্রমাণ দিল যে তারা তাদের পুরোনো চরিত্রই ধরে রেখেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে শুধু পুলিশ দিয়ে কাজ হয়নি, মাঠে নামতে হয়েছে বা নামানো হয়েছে ছাত্রলীগকেও!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের ওই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির হলেও সামগ্রিকভাবে সংগঠনটির এবং চূড়ান্ত বিচারে সরকারের। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কিসের জোরে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তা আমাদের সবারই জানা। প্রথম আলো পত্রিকায় অস্ত্র হাতে যাদের ছবি ছাপা হয়েছে, তারা অচেনা দুর্বৃত্ত নয়, এদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক! তাঁরা অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন! এঁদের নেতা বানিয়েছেন কারা? কাদের সমর্থন ও আশীর্বাদ রয়েছে তাঁদের ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পেছনে?
বর্ধিত বেতন-ভাতা প্রত্যাহার বা সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে
পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বসে তা ঠিক করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। এসব বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে কেন মাঠে নামতে হলো? সরকারের তরফে সায় না থাকলে এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে! এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারকে এখন প্রমাণ করতে হবে যে এই দুর্বৃত্তপনা ও অপকর্মে তাদের কোনো সায় ছিল না।
শিক্ষামন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘তদন্তের ভিত্তিতে দায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা শুধু আশ্বাস নয়, কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই। অস্ত্রধারী হিসেবে যাদের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তারা তো এরই মধ্যে চিহ্নিত। একজন সাধারণ অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ও ছাত্রলীগের এই নেতাদের মধ্যে আইনগত পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেখতে চাই, আইন তার নিজের গতিতে চলছে। কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের জন্য কি আইন নিজের মতো চলে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সবাই সময়মতো হল ত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের পরও হলে অবস্থান করছিলেন।
নতুন করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন তাদের যে জঘন্য রূপ প্রকাশ করল, এর বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

নিরাপত্তা ও শিক্ষা দুটোই জরুরি বিষয়- স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প

Wednesday, January 22, 2014

রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে গত বছর নানা সময়ে চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে, শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ।
কিন্তু ঠাকুরগাঁও জেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না। স্কুলটি এখন পুলিশ ক্যাম্প, ফলে ক্লাস ও পাঠদান সবই বন্ধ!

গত বছর ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন বছরের শুরুতে নতুন উদ্যমে পাঠদান শুরুর বিষয়টিই ছিল প্রত্যাশিত। শিক্ষার্থীরা নতুন বইও পেয়েছে, কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় এই স্কুলটি শিক্ষার্থীদের জীবনে গত বছরের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন ক্ষতি। স্কুলটিকে পুলিশ ক্যাম্প বানানোর পেছনে বাস্তব কারণ রয়েছে। ভোটের দিন বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়া স্কুলটি। আর ভোটের পর সেই একই গোষ্ঠীর হামলার শিকার হয় কাছাকাছি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান ও বাড়িঘর। এ নিয়ে সংঘাত-সহিংসতায় একজনের প্রাণহানিও ঘটেছে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয় স্কুলটিতে। শিক্ষা না নিরাপত্তা—এ বিবেচনায় সম্ভবত নিরাপত্তার বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনও তো এভাবে দিনের পর দিন নষ্ট করার সুযোগ নেই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষার দিকটিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন প্রতিযোগিতামূলক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ক্লাস বন্ধ থাকায় এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে। স্কুলটি খোলা রেখে কীভাবে সে অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা যায় বা বিকল্প হিসেবে কোথায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের মনোযোগ প্রত্যাশা করছি। আর সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ভার শুধু প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ছেড়ে না দিয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

অনেক হয়েছে, এবার বন্ধ করতে আইন চাই- রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার

Monday, January 20, 2014

একজনের নির্বাচন বিজয়, তা-ও আবার প্রতিদ্বন্দ্বীহীন; কেবল আনুগত্যের যোগ্যতায়। দলের কাছে, জয়ী ব্যক্তিদের কাছে এসব অবশ্যই উদ্যাপনের মতো বিষয়। কিন্তু তাতে স্কুলের শিশুদের ব্যবহার করা কেন?
বহু বছর ধরে এ রকম উৎকট দেখানোপনা চলছে, যা কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে সাংসদ হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাসিবুর রহমান। এদিকে ধর্মমন্ত্রীকে সরকারি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যে সংবর্ধনা দিয়েছেন, তা দিগ্বিজয়ী আকবর বা আলেকজান্ডারদেরই মানায়। তাঁরা এলাকায় আসবেন বলে দলের পক্ষ থেকে উচ্ছ্বসিত সংবর্ধনা হতেই পারে। কিন্তু যে শিশুরা রাজনীতি বোঝে না, কারও বিজয়ের শোভাবর্ধনের চাকরি করে না; তাদের কেন রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা? একদলের ককটেলে শিশুরা আহত হবে, অন্য দল রাজনৈতিক আয়োজনে শিশুদের ব্যবহার করবে, এটা কেমন ধরনের রাজনীতি?
উন্নত সংস্কৃতিতে শিশুদের পূর্ণ ব্যক্তিমানুষের মর্যাদা দেওয়া হয়। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে সম্মান দেখানো হয়। তাদের প্রহার বা ব্যবহার দুটোই সেসব দেশে নিষিদ্ধ। এবং এর জন্য সব ক্ষেত্রে আইনও করা লাগে না, সংস্কৃতির ভেতর থেকেই মানুষ এটা শেখে এবং পালন করে। অথচ আমাদের দেশে যাঁরা নাকি হবেন পথপ্রদর্শক, তাঁরাই শিশুদের জয়-পরাজয়ের লড়াইয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেন। কখনো তাদের বাসভর্তি করে জনসভায় নেওয়া হয়, কখনো তাদের রাস্তার দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বিশেষ কাউকে হাত নাড়িয়ে সংবর্ধনা দিতে হবে বলে। যারা রাজনীতির কিছুই বোঝে না, তাদের এমন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনের নির্দেশনা থাকা উচিত।
বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের ‘রাজকীয়’ তথা জমিদারসুলভ চর্চা চলছে। অনেক নেতা ও সাংসদ আছেন যাঁরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধি ভাবেন না, জনগণের সেবক মনে করেন না, মনে করেন ‘রাজা’। বাকিরা কি তাহলে তাঁদের প্রজা? এই মানসিকতা কেবল অগণতান্ত্রিকই নয়, স্বেচ্ছাচারীও। আর কোনো সংবর্ধনায় যেন শিশুদের ব্যবহার করা না হয়। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ চাই।

সংলাপ-সমঝোতার বিকল্প নেই- শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক

Friday, January 17, 2014

১৮-দলীয় জোটের প্রধান নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর কোনো হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেননি। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ, কয়েক মাস ধরে এই নেতিবাচক কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশের জনগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে; আন্দোলনের নামে মানুষের প্রাণহানি, ধ্বংসযজ্ঞ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা ও জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির এই ধারা আর চলতে দেওয়া উচিত নয়।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নয় দিন পর গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া নতুন সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ আখ্যা দিলেও এ সরকারের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন—এটাকেও আমরা ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। কারণ, সংলাপ-সমঝোতা ছাড়া চলমান রাজনৈতিক সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের ‘বৈধতা’র প্রশ্নটির থেকে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুই পক্ষের মধ্যে কার্যকর রাজনৈতিক সম্পর্কের সূচনা ঘটানো। শুধু সংলাপের মাধ্যমেই সেটির সূচনা ঘটানো সম্ভব, যেখানে সমঝোতার মানসিকতা অপরিহার্য।
হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচির উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্রের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত’ রাখার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে আমাদের পরিপূর্ণ স্বস্তি বোধ হয় না। কারণ, তাঁর ভাষায় যে ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’ এত দিন চলে এসেছে, তা ‘অব্যাহত’ রাখা হলে জনজীবনে শান্তি ফিরে আসবে না। সবকিছুর আগে এই সহিংস ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের ধারা বন্ধ করতে হবে। মুখে ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের কথা বলা আর কার্যত জবরদস্তিমূলক, সহিংস, আতঙ্ক সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা স্ববিরোধিতা। বিরোধী জোটের কর্মসূচিগুলোতে যেসব সহিংসতা ঘটেছে, সেগুলোর দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে বিরোধী জোট দায়মুক্ত থাকতে পারে না। উপর্যুপরি সহিংস কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে বিরোধী জোটের যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে বিরোধী জোটের এযাবৎকালের আন্দোলনের ধারা ‘অব্যাহত’ রাখার ভাবনাটি বাদ দিয়ে ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’ কথাটির প্রতি আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটাতে হবে বাস্তব ক্ষেত্রে।
সরকারকেও দমন-পীড়নের কৌশল পরিত্যাগ করে বিরোধী দলগুলোর সংবিধানপ্রদত্ত অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে বিরোধী জোটকে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করা এবং তাদেরকে সম্পূর্ণ কোণঠাসা করে রাখার কৌশল বজায় রেখে সরকার সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। অর্ধেকের বেশি আসনে একেবারেই ভোট না হওয়া এবং অবশিষ্ট আসনগুলোতে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকায় নতুন সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি দুর্বল। এই প্রেক্ষাপট স্বীকার করে নিয়ে সরকারকে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সদাচরণের নীতি গ্রহণ করে সামগ্রিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নিতে হবে; সর্বোপরি সমঝোতার মানসিকতা নিয়ে সংলাপ শুরু করতে হবে। বিরোধী জোটকে রাজনৈতিক আন্দোলনে বাধা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তা পালনে সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব বৈকি।

সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি- বহির্বিশ্বের উদ্বেগ ও তাগিদ

Sunday, January 12, 2014

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বন্ধুদেশ ও উন্নয়ন-সহযোগীরা যেসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নেতিবাচক।
জাতিসংঘসহ বেশির ভাগ সংস্থা ও দেশ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচন, ভোটারের ন্যূনতম উপস্থিতি এবং নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘটিত ব্যাপক সহিংসতায় হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবার আলোচনা শুরু করার তাগিদ দিয়েছে।

সুষ্ঠু ও সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা জরুরি। আরও বেশি জরুরি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার দ্বারা দেশ পরিচালিত হওয়া। দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশের জনগণ ৫ জানুয়ারি সর্বজনগ্রাহ্য সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন পায়নি। কেন পায়নি, এ জন্য কার দায় বেশি, সে তর্কের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর বিবৃতিতেও যার প্রতিধ্বনি রয়েছে।
যেসব দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাহারের বিষয়টিও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তৈরি পোশাকশিল্পে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের অভাবের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি-সুবিধা তুলে নেওয়ার পর রাজনৈতিক কারণে ইইউ বা অন্য কোনো সংস্থা যদি কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আলোচনার বাইরে রাখলে কিংবা তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ রহিত করা হলে তাদের অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনোত্তর সহিংসতার দুটি দিক আছে। প্রথমটি আইনশৃঙ্খলাজনিত, দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থানকে মানুষ স্বাগতই জানাবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করলে সেটি উন্নয়ন-সহযোগী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেমন সুনজরে দেখবে না, তেমনি চলমান রাজনৈতিক সংকটকেও ঘনীভূত করবে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। এই অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দেশগুলোকে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা। সরকার যে সংবিধান রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছে বলে দাবি করে, দেশ শাসনে সেই সংবিধানে বর্ণিত জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখা হলে অনেক সমস্যার সমাধানই সহজ হয়ে যাবে।

উচ্চ আদালতের রায়ের অবমাননা বন্ধ হোক- পুলিশি রিমান্ড

Saturday, January 11, 2014

রিমান্ড প্রশ্নে যেসব কাণ্ড চলছে, তার স্থায়ী বিহিত হওয়া দরকার। উচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে যাওয়া যাবে না—এমন যুক্তি ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা প্রায় প্রবাদ বাক্যে পরিণত করেছেন।
অথচ রিমান্ড-সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশনা বিএনপি সরকারের মতোই অগ্রাহ্য করে চলেছে তারা। অন্যদিকে রিমান্ড প্রশ্নে সাম্প্রতিক কালে হাইকোর্ট থেকে বিচ্ছিন্নভাবে যে ধরনের প্রতিকার মিলছে, তাতে আইনের বৈষম্যমূলক প্রয়োগই প্রতিভাত হচ্ছে। রমনা থানায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালত দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। এর একজন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, অন্যজন সাবেক ছাত্রনেতা ফজলুল হক মিলন। এখন হাইকোর্ট থেকে শুধু রিমান্ড আদেশ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের সাত দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এর আগেও বিএনপির একজন আইনজীবী নেতা অনুরূপ প্রতিকার পেয়েছেন।

রিমান্ড প্রশ্নে আইন বা উচ্চ আদালতের আদেশে কোনো আলাদা বিধান নেই। ভিআইপি ও চিহ্নিত অপরাধীর মধ্যে কোনো ফারাক সৃষ্টি করা হয়নি। বস্তুত প্রচলিত আইনের কোথাও রিমান্ড শব্দটিই নেই। অপ্রিয় হলেও সত্য, এটা আইন ও সংবিধানের চেতনাবিরুদ্ধ একটি অনুশীলন। সংবিধান বলেছে, কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা আদায় করা যাবে না। সরকার থেকে রিমান্ডের আবেদন করে এবং নিম্ন আদালত থেকে তা মঞ্জুর করার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে সংবিধানের ওই চেতনার ব্যত্যয় ঘটে চলেছে।
তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা দুর্ধর্ষ আসামির ক্ষেত্রে প্রলম্বিত জিজ্ঞাসাবাদ বিশ্বের সব ফৌজদারি অপরাধ বিচারব্যবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে রিমান্ড মানেই বিভীষিকা। প্রতিপক্ষ দমনে বিএনপি সরকারও এটা ব্যবহার করেছিল বলে তারা উচ্চ আদালতের সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৩ সালে বিচারপতি মো. হামিদুল হক ও বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ৫৪ ধারায় পুলিশের পাইকারি গ্রেপ্তার এবং তাদের আবেদনক্রমে আদালতের রিমান্ড মঞ্জুরের বিরুদ্ধে একটি বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করেন। পুলিশ আচরণ বদলায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিচার বিভাগ কি বদলেছে? সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের রায় নিম্ন আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয়।
২০০৩ সালের পর দুই দলের সরকারের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য ঘটেছে। সেটি হলো, এক-এগারোর কারণে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে। অধস্তন আদালত দাবি করে থাকেন, তাঁরা আগের চেয়ে স্বাধীন। কিন্তু রাজনৈতিক মামলার ক্ষেত্রে পুলিশের দুটি স্বভাবগত আচরণ আমরা দেখি—ওপরের হুকুমে মামলা দায়ের এবং জামিনের বিরোধিতাপূর্বক রিমান্ডের আবেদন। দুটোই অবশ্য আদালতের স্বাধীনতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
আদালতের নির্দেশনা মেনে আইনে উপযুক্ত সংশোধনী আনা হোক। ডিবি পুলিশের হাজতখানা বন্ধ হোক। অনতিবিলম্বে রায় মেনে কারাগারে পৃথক কক্ষ স্থাপন এবং সেখানে অভিযুক্তের আইনজীবী ও আত্মীয়ের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথা চালু হোক। উচ্চ আদালতের রায়ের অবমাননা বন্ধ হোক।

সরকারের কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে- খালেদা জিয়া কি অন্তরীণ?

Friday, January 3, 2014

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত।
সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধীদলীয় নেতাকে ছায়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হয় এবং তাঁকে সেভাবেই দেখতে হবে। কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিস্থিতি এমন হতে পারে না যে গণতন্ত্র বাঁচাতে ছায়া প্রধানমন্ত্রীকে অঘোষিতভাবে অন্তরীণ করে রাখতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা অহর্নিশ আপ্তবাক্য উচ্চারণ করেন যে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। কিন্তু তাঁরা ভুলে যান, এর প্রবক্তাদের জন্যও কথাটি পুরোপুরি সত্য।

যদি যুক্তি দেওয়া হয় যে বিনা অনুমতিতে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের অধিকার বিরোধী দলের নেতার ছিল না, তাহলেও এটা জনগণের চোখে প্রতীয়মান হতে হবে যে তাঁর প্রতি কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার আইনগত অবস্থান কী, তা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এটা পরিহাসমূলক যে তাঁর অবস্থান প্রশ্নে উপযুক্ত সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যাখ্যা না এলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা মন্ত্রীদের কাছ থেকে সময়ে সময়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে।

বিএনপির তরফ থেকে খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী উল্লেখ করা হলেও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তিনি গৃহবন্দী নন। তাঁর যুক্তি: ‘গৃহবন্দী করতে হলে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়। এ ধরনের কিছু হয়নি।’ তাঁর কথায় মনে হবে, এই রাষ্ট্রে আইনের বাইরে কিছু ঘটে না। আবার পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে অন্তরীণ করে রেখেছেন। দুই মন্ত্রীর মন্তব্যে ফারাক আছে। যেকোনো নাগরিক তাঁর বাসায় স্বেচ্ছায় অবস্থান করলে তাঁকে কেউ নিজেকে অন্তরীণ রাখা বলে না। এ ক্ষেত্রে তথ্যমন্ত্রীর দাবি সত্য বলে মনে করা যেত, যদি বিরোধীদলীয় নেতার বাসার প্রধান ফটকের দুই পাশে বালুভর্তি ট্রাক নববর্ষের প্রথম দিনটিতেও না থাকত। উপরন্তু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপির নেতাদের আটকের ঘটনাও অভাবনীয়।
বিরোধী দলের নেতাকে কথিত শান্তি ও স্থিতির প্রতি হুমকি বিবেচনা করেই আইন এড়িয়ে বলপ্রয়োগ চলছে। তিনি কবে বাসা থেকে বের হতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সেটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। আবার এ কথাও সত্য, খালেদা জিয়া এমন ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন, যে কারণে তাঁর বর্তমান অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হওয়ার মতো সুযোগও তৈরি করে রাখা হয়েছে। গৃহবন্দী অবস্থাটি সংগঠনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও দাবি করা হয়নি।

চার দিন পরে গতকাল অবশ্য স্পিকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। আজ দেখা করা হবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। স্পিকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও এ বিষয়ে খোঁজ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি নেননি, এটাই বাস্তবতা। তবে খালেদা জিয়া অন্তরীণ নন, সেটা সরকারকে শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ দিতে হবে।

দোষীদের বিচার ও হাইকোর্ট বিধি কার্যকর হোক- সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সহিংসতা

বাংলাদেশে আইনের শাসন যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে, তার প্রমাণ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অব্যাহত দলীয় অপতৎপরতা, যা সময়ে সময়ে সহিংস রূপ নিয়ে থাকে।
দুই বিবদমান দলের সমর্থক আইনজীবী, যাঁরা এর আগে বহিরাগতদের সাহায্য ছাড়া নিজেরাই ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছেন, তাঁদের আমরা পুরস্কৃত হতে দেখেছি।

২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির একটি নজিরবিহীন আদেশের পর আওয়ামী লীগ-সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত চত্বরে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে বিচারকেরা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। এবং বিস্ময়করভাবে ড. কামাল হোসেনসহ শীর্ষ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলা ছিল নিঃসন্দেহে বিএনপি-সমর্থক মহলের হঠকারিতা। কিন্তু সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি হোক, প্রকৃতপক্ষে তা কেউ চায়নি বললে অত্যুক্তি হবে না। দায়মুক্তির সংস্কৃতিটা আসলে উভয় দলের কাছেই উপভোগ্য। সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার প্রশ্নটিও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
এবারের সন্ত্রাস ও কদর্যতা অবশ্য ২০০৬ সালকেও ছাড়িয়ে গেছে। সরকার-সমর্থক বহিরাগতদের বিরুদ্ধে একজন নারী আইনজীবীর ওপরও নিষ্ঠুর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। একজন প্রবীণ আইনজীবী জনৈক বিচারকের বরাতে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের জানাজা হয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুই দলের সমর্থক আইনজীবী, যাঁরা সাধারণত আইনকানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দলবাজিতে লিপ্ত থাকেন, তাঁদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের প্রথম বৈঠকটি ভেস্তে যাওয়ারই খবর মিলেছে।
৩১ ডিসেম্বরের বৈঠকে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে মিছিল-সমাবেশ না করার অঙ্গীকার করেছিলেন মর্মে খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তা অস্বীকার করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে সংশোধিত হাইকোর্ট রুলসে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা আছে, যদিও তা কোনো দলই মানে না। বিএনপির আমলে বিচারপতি এম এ মতিন আদালত চত্বরে মিটিং-মিছিল বেআইনি ঘোষণা করলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন। পরে ওই রায় অমান্য করে চলতে দুই পক্ষের মধ্যে অলিখিত আঁতাত গড়ে ওঠে।
আমরা ২৯ ডিসেম্বরের ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার এবং সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার বিধান কঠোরভাবে কার্যকর করার দাবি জানাই।

সমঝোতার পথ খুঁজুন- কেন সরকারি অবরোধ?

Sunday, December 29, 2013

বিরোধী দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ২৯ ডিসেম্বর হলেও সরকার আরও আগেভাগেই প্রস্তুত। দুই দিন আগে থেকেই সম্ভব-অসম্ভব সব উপায়ে ঢাকামুখী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে সরকার।
সড়ক, নৌ ও রেলপথের কোনোটিই যাতে বিরোধী দলের সমর্থকেরা ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য চলছে ‘সরকারি অবরোধ’। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি, একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহারের পরিণাম—কোনো কিছুরই পরোয়া করছে না সরকার।

ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ যে কার্যত বিচ্ছিন্ন, তার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সরকারের এই ‘অবরোধ’ কর্মসূচির সঙ্গে তুলনীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার রাজার আহাম্মকি। পায়ে ধুলা লাগবে বলে সমস্ত পথঘাট চামড়া দিয়ে মুড়ে দেওয়া যায় না। বরং নিজের পায়ে জুতা পরাই বুদ্ধিমানের কাজ। সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকাতে সমগ্র রাজধানীসহ সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ করে সেই ভুলই করছে। জন চলাচলে বাধা দিয়ে, গণহারে তল্লাশি-হয়রানি-গ্রেপ্তার করা কোনো আইনি কর্তৃপক্ষের আচরণ হতে পারে না।

বিরোধী দল যতবার কর্মসূচি দেবে, ততবারই কি সরকার এই আচরণ করবে? সেটা কি কার্যত সম্ভব? এতে কি সরকারের জনবিচ্ছিন্নতাই আরও বাড়বে না? এতে কি দেশের ক্ষতি হয় না? প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন, বিরোধীদের ধরপাকড়-দমন, কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক বাধা—বিশ্বের কাছে এই চিত্র মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এসব আসলে মূল সমস্যা থেকে উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে থাকার শামিল।
একদিকে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে অভিযানে অংশ নিচ্ছেন, বিরোধীদের ঘরবাড়ি তছনছ করছেন, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিরোধীদের সমাবেশ ঠেকাতে দলীয় কর্মীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর ডাক দিতে দ্বিধা করছেন না। ঢাকার প্রবেশপথ দিয়ে মাছিও যাতে প্রবেশ না করতে পারে, তার জন্য কর্মীদের পুরস্কারের আশ্বাস ও শাস্তির হুমকি দিচ্ছেন। বিরোধী দল ও সরকারের আচরণ যদি সংঘাতের পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে দেশের অধোগতি অনিবার্য।
দেশ চালাতে হলে, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে বিরোধী দলের সঙ্গে আপস-মীমাংসার পথ বের করতেই হবে সরকারকে। বিরোধী দল মানে কতিপয় নেতা-নেত্রী নন; বিরোধী দল মানে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ, যারা ওই সব নেতা-নেত্রী এবং তাঁদের দাবি-দাওয়ার সমর্থক। বিরোধী দলকে দমনের মাধ্যমে সরকার দেশবাসীর একটি অংশকে অপদস্থ ও উপেক্ষিত করে রাখতে পারে না। সরকার দলনির্ভর হলেও তাকে দেশের অধিকাংশ জনগণের দিকে তাকিয়ে দেশ চালাতে হয়। একতরফা নির্বাচন করতে ‘সরকারি অবরোধ’ ও পুলিশি শক্তির মাত্রাছাড়া ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পথ যে ব্যর্থ হতে বাধ্য, সরকারের এই উপলব্ধি ছাড়া সামনে সমূহ অমঙ্গল এড়ানো সম্ভব নয়। আবার আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের সহিংসতা ও নাশকতাও গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়?- দুই পক্ষের কঠোর অবস্থান

Thursday, December 26, 2013

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ঢাকা অভিমুখী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ করতে দেওয়া হবে না বলে সরকার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের লোকজনকে কোথাও জড়ো হতে দেবে না সরকার।
আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে অন্তত এক সপ্তাহ সরকার দেশে কোনো রাজনৈতিক গোলযোগ হতে দিতে চায় না। মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে পেট্রলবোমায় পুলিশের সদস্য হত্যা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধীদলীয় জোটের ১৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পেছনেও ওই একই উদ্দেশ্য।

নাশকতা ও ককটেল-পেট্রলবোমার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সরকারের মুখে সব সময় শোনা যাচ্ছে। এবার
২৯ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ ঠেকাতেও কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আর
বাকি রেখেছে কি? যেকোনো নাশকতায় দু-চারজনের নাম দিয়ে শত শত বা হাজার হাজার ‘অজ্ঞাত’ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেকে মারা যাচ্ছেন। আর কত কঠোর হবে সরকার?

অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর তাঁদের কর্মসূচিতে বাধা দিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। তাঁদের ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে পরিণতি কঠিন ও করুণ হবে বলেও তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

প্রশ্ন হলো, বিরোধী দল যেভাবে বাসে পেট্রলবোমা মেরে, ককটেল ফাটিয়ে মানুষ হত্যা করছে, অবরোধের নামে রেলের ফিশপ্লেট খুলে যাত্রী হত্যা, গাছ কেটে ‘জলবায়ু-অপরাধ’ সাধন, এমনকি বোমা মেরে গরু পুড়িয়ে মারার মতো ঘৃণ্য অপরাধ করে চলেছে, এরপর আর কত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে চায় ওরা? বিরোধী দল কি সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে?

আর কত হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বাসে পেট্রলবোমা মারার পর বিরোধী দল বলবে,
যথেষ্ট কঠোর পরিণতি ডেকে আনা হয়েছে?  আর সরকারই বা আর কত জেল-জুলুম-নির্বিচার গুলি চালিয়ে বলবে, তারা যথেষ্ট কঠোর হয়েছে?

স্বাভাবিক বিচার-বিবেচনা থাকলে কোনো দায়িত্বশীল দল রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বা কোনো সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি দমনের নামে এত নির্মম আচরণ করতে পারে না। রাজনীতি মানুষের জন্যই। তাই রাজনীতির জন্য যেন একজন নাগরিকের প্রাণও বিপন্ন না হয়, তা দেখা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কর্তব্য। যাঁরা সরকারের আছেন, তাঁদের দায়িত্ব আরও বেশি। কারণ, সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনার জন্যই তাঁদের জনগণ নির্বাচিত করেছে।

২৯ ডিসেম্বর ঘিরে দেশে সৃষ্ট অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবসান হোক। সরকার ও বিরোধী পক্ষ আরও দায়িত্বশীল আচরণ করুক। মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।

নেতা-কর্মী হত্যার রাজনীতি বন্ধ করুন- আন্দোলন না আক্রোশ?

Monday, December 23, 2013

একতরফা নির্বাচন বন্ধের জন্য বিরোধী দল যে আন্দোলন করছে, তা দেখা যাচ্ছে ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসায় রূপ নিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এর ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। গত কয়েক সপ্তাহে শিবগঞ্জ উপজেলার টিকরি গ্রামের ২৫টি বাড়ি ও ৩০-৩৫টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ দল আওয়ামী লীগ করে বা তাদের ভোট দেয়, এই অপরাধে বেছে বেছে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের এক নেতা পারিবারিক কবরে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাননি, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের ওপরও চলছে হামলা। তাদের ঘরবাড়ি-সহায়সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপরও চলছে নির্বিচার হামলা। ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুককে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে ভয়াবহ আক্রমণ। এ রকম হত্যা-আক্রমণ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে।
গত শনিবার শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ছাত্র মৈত্রীর সভাপতিকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মারা হয়। তিনিসহ মোট তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। উগ্রপন্থীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গণ-অংশগ্রহণ ছাড়া গণ-আন্দোলন হয় না। এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটির প্রতি নেতৃত্বকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য যেন হামলা চালানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্দোলন আক্রোশে পরিণত হলে তার পাল্টাপাল্টি জের চলতে থাকে। আজ কোথাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হলে, কাল হয়তো বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরও নেমে আসবে পাল্টা হামলা। কারণ, পরিস্থিতি সব সময় একই রকম থাকে না। আজ যেখানে এক দলের আধিপত্য, কাল সেখানে শক্তির ভারসাম্য একেবারে উল্টে যাওয়া বিচিত্র নয়।
রাজনীতিতে নৈরাজ্যের কোনো স্থান নেই। গণতন্ত্রের জন্য এ দেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে। সেখানে ব্যক্তি-হত্যার বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটানোর জন্য হামলা চালানোর অপকৌশল শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়েছে। কারণ, ওই পথে আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে অতীতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতার আলোকে সুস্থ ধারার আন্দোলনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে; হত্যা বা আগুন দিয়ে নয়।
আন্দোলনকে রাজনীতির প্রথাগত পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে দুই পক্ষের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। কোনো দলের নেতা বা ব্যক্তিকে হত্যা, তাদের ওপর হামলা বা বাসায়-দোকানে আগুন দেওয়ার মতো হিংসাত্মক তৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

হানাহানির রাজনীতির বিরুদ্ধেও শক্তিশালী বার্তা- বিশ্বজিৎ হত্যার বিচারের রায়

Saturday, December 21, 2013

বিশ্বজিৎ দাসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের নিরাপত্তা বোধের অসহায়ত্বই প্রকট হয়ে উঠেছিল। অবশেষে বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ায় হত্যার বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় ঘোষিত হয়েছে।
রায়ে আদালত যথার্থই বলেছেন, ‘এটা (হত্যা) মানবতা ও নৈতিকতার কোনো স্তরেই পড়ে না। নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ও অহেতুক রক্তপাত সমর্থনযোগ্য নয়।’ বাংলাদেশে জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে হানাহানির সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একে বার্তা হিসেবেও পাঠ করা যায়।
হত্যা মামালার রায় শুনতে আদালতে বিশ্বজিতের সহোদর । ছবি-শাহীন কাওসার, মানবজমিন।
এই রায়ের মাধ্যমে আসামিরা শাস্তি পেয়েছেন, বিশ্বজিতের পরিবার ও ন্যায়প্রত্যাশী দেশবাসী সান্ত্বনা পেয়েছে। বিশ্বজিতের মা গ্রেপ্তার না হওয়া আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানিয়েছেন। আসামিপক্ষ নিশ্চিতভাবে উচ্চ আদালতে আপিল করবে। ইতিমধ্যে আদালত প্রাঙ্গণেই আসামিদের কেউ কেউ ‘কিছু হইব না’ বলে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছেন। তবে কি এখনো তাঁরা কারও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া পাচ্ছেন? পাশাপাশি এ কথাও আসবে, বিশ্বজিতের হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা কেন ছাড় পাবে?
আপিল নিষ্পত্তির পর আসবে রায় কার্যকর করার প্রশ্ন। তার আগে অন্তত এটুকু বলা যায়, এই রায় রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধেও শক্ত হুঁশিয়ারি। এর আলোকে নারায়ণগঞ্জের কিশোর ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের আশু বিচারও প্রত্যাশিত। বিচারাধীন এবং বিচারের প্রক্রিয়া থেকে দায়মুক্তি পাওয়া নৃশংস খুনিদেরও অনুরূপভাবে দণ্ডিত হওয়া দরকার। নইলে চুনোপুঁটিদের শাস্তি হয়, রাঘববোয়ালেরা রেহাই পান; এমন ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।
একটি খুনের মামলায় আটজনের ফাঁসি ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন দণ্ড আলোড়ন সৃষ্টিকারী দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে সরকার-সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় বিচার হওয়া ইতিবাচক ঘটনা। তবে অন্য সব হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারের বেলায়ও সরকার একই রকম সহায়ক থাকে, তবেই বলা যাবে সরকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জীবনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
আদালত তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার, বিশ্বজিতের খুনিরা খুনি হয়ে জন্মাননি। এই সমাজ ও রাজনীতি তাঁদের তৈরি করেছে। তাঁরা সহিংস রাজনীতিরও হাতিয়ার। হাতিয়ারের বিচার হলেও, তাঁদের ব্যবহারকারী হাতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত হত্যার রাজনীতি বন্ধের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করি।

সহিংস রাজনীতি সমর্থনযোগ্য নয়- অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি

Wednesday, December 18, 2013

বিজয় দিবসের আগের দিন দেশজুড়ে ব্যবসায়ী সমাজ সাদা পতাকার প্রতিবাদবন্ধন কর্মসূচি পালন করল। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতি যেভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে,
তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাতে এবং ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি প্রবল অনীহা জানাতেই এই প্রতিবাদবন্ধন কর্মসূচি। কিন্তু তাদের এই বার্তা যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্ণকুহরে সেভাবে প্রবেশ করেনি, তা এখন পরিষ্কার। সব অনুরোধ-আহ্বান উপেক্ষা করে বিরোধী দল নবোদ্যমে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করল। এর ফলে কয়েক মাস ধরে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক সহিংসতার যে নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়েছে, তা আরও প্রলম্বিত হবে।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে ইতিমধ্যে কতখানি সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে, তা বোঝা যায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত একগুচ্ছ প্রতিবেদনে। এসব প্রতিবেদনে সব ধরনের ব্যবসায়ী-শিল্পপতির অসহায় অবস্থা ফুটে উঠেছে। ফুটে উঠেছে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো সময়মতো রপ্তানিপণ্য জাহাজে তুলতে না পেরে চড়া মাশুল গুনছে, ২০ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া লাখ টাকা হয়ে পরিবহন ব্যয় কয়েক গুণ বাড়িয়েছে, স্থলবন্দরগুলোতে পণ্য জমে গেছে, যা বাজারে ও কারখানায় আনা যাচ্ছে না, বিভিন্ন কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন অনিশ্চিত সময় কাটাচ্ছেন। দাবি আদায়ের নামে হরতাল-অবরোধে এখন পুড়ছে পণ্যবাহী ট্রাক, থেমে যাচ্ছে কারখানার চাকা, আহত হচ্ছেন রাস্তার ধারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নাশকতার শিকার হচ্ছে রেলপথ।

এ রকম অবস্থা আরও কত দিন চলবে, তা কেউ বলতে পারছে না। ইতিমধ্যে এই ধ্বংসযজ্ঞ যে গোটা অর্থনীতিকে অনেকখানি পিছিয়ে দিয়েছে, তা কোনো রকম অঙ্ক কষা ছাড়াই বলে দেওয়া যায়। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই দশকে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে একটি গতিময় ও স্পন্দবান অর্থনীতিতে রূপ নিচ্ছিল। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৫৯তম, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে তৃতীয় স্থানটি বাংলাদেশের, সহজে ব্যবসা করার বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সর্বোপরি ২০২১ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পথে অভিযাত্রায় ছিল বাংলাদেশ। চলমান অসুস্থ রাজনীতির সহিংস ছোবলে সেই অভিযাত্রার পদযুগলে বিরাট ক্ষতের সৃষ্টি হলো। সামনে এগোনোর চেয়ে এই ক্ষত সারানোর দাওয়াই প্রয়োগই এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

এ রকম একটা অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী আচরণই কাম্য। দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরির ক্ষেত্রে সরকারি দলের দায় যেমন বেশি, তেমনি এই ধ্বংসযজ্ঞ বিস্তারের বড় দায় প্রধান বিরোধী দলকেই নিতে হবে। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো জামায়াত-শিবির এই ধ্বংসযজ্ঞের দাবানল ছড়িয়ে দিতে যে হিংস্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা কঠোরভাবে দমন করার জন্য সরকারের কুশলী পদক্ষেপ প্রয়োজন। অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিলে তার মূল্য কমবেশি সবাইকে দিতে হবে, আর এই ক্ষতি আসলে অপূরণীয়।

সন্ত্রাস দমন হোক আইনের সীমার মধ্যে থেকে- যৌথ বাহিনীর অভিযান

Tuesday, December 17, 2013

গতকাল সোমবার যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাতক্ষীরায় পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। জামায়াত অবশ্য দুজনের মৃত্যুর কথা বলেছে। লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছে একজন। গত রোববারও লক্ষ্মীপুরে র‌্যাবের গুলিতে আরও একজনের নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
অব্যাহত নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন করে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনা যেমন দরকার, তেমনি দরকার খেয়াল রাখা যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যেন নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি না হয়।

ছবিঃ ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত।
হরতাল-অবরোধের নামে জনপরিবহনে আগুন দিয়ে হত্যা, রেলে নাশকতার হত্যা, প্রতিপক্ষকে বেছে বেছে হত্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হত্যা; বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরে যেভাবে বাড়ির ভেতর ঢুকে পর পর দুজন বিরোধী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের ধরন নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। যাঁরা আন্দোলনের নামে নির্বিচার হত্যা-ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই দমন করতে হবে। এসব দাবি আদায়ের পথ হলে খুনি-সন্ত্রাসীদেরই আন্দোলনের শিরোপা দিতে হয়। এভাবে কেবল রাজনীতি সম্পর্কেই মানুষের ঘৃণা জাগছে না, তা দেশের স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকেই আঘাত করছে।

রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, সেসব অঞ্চলের জনজীবনকে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ রেখে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে আগুন ও হত্যা বন্ধে সরকারি বাহিনীর অভিযান তাই খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু অভিযানের নামে অভিযুক্তকে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা কোনো আইনানুগ বাহিনীর কাজ হতে পারে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব সন্ত্রাসীকে ধরে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

আইন দ্বারা ক্ষমতায়িত বাহিনীর আচরণ অবশ্যই আইনের সীমা অনুযায়ীই হতে হবে। বিনা বিচারে কাউকে হত্যার রীতি সভ্য সমাজে নেই। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা যে পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে, সেই একই পদ্ধতি র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি নিতে পারে না। সন্ত্রাসীদের যে বিচার-বিবেচনা করতে হয় না, সেটা করতে হয় রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক সন্দেহ নেই। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা এবং সেই কাজে যারা বাধা দিয়ে আসছে, তাদের মোকাবিলা করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা এমন কিছু করতে পারে না যাতে জনগণ আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আইনি সীমার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজ করতে হবে। নির্বিচারে ধরপাকড়, গ্রেপ্তারের নামে বাণিজ্য, বিনা বিচারে হত্যার চর্চা তাদের এই বিশেষাধিকারের অপপ্রয়োগ বলে গণ্য হবে। তাতে জনমনে অনাস্থা বাড়বে, তার সুযোগ নেবে নাশকতাকারীরা।

আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে তারাও পাশে থাকবে। সরকারি বাহিনীর মতো বলপ্রয়োগের এখতিয়ার কি সরকারে আসীন দলের রয়েছে? পুলিশের কাজ তারা করা মানে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। আমরা সহিংসতা-নাশকতা বন্ধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ যেমন চাই, তেমনি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে, সেটা প্রত্যাশিত নয়।

বিএনপিকে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে- দেশ ধ্বংসের আন্দোলন!

Monday, December 16, 2013

১৮-দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি দাবি করে আসছে যে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ধ্বংসাত্মক আন্দোলন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড তারা সমর্থন করে না। তারা ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলন করছে সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে।
কিন্তু দলটি নিজেদের যৌক্তিক আন্দোলনকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি করে ফেলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ভিডিও বার্তা বা বিবৃতির মাধ্যমে বিএনপির নেতারা কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের হত্যা, নৈরাজ্য ও নাশকতা শুরু হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যজনক যে, বিরোধী দলের ‘শান্তিপূর্ণ’ অবরোধ কর্মসূচি শুধু জনগণের অবর্ণনীয় দুর্ভোগই সৃষ্টি করেনি, বহু প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী সারা দেশে হত্যা, নৈরাজ্য ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। সরকারি স্থাপনা, পুলিশের যানবাহন, যাত্রীবাহী গণপরিবহন ও ট্রেনে চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর পাশাপাশি তারা সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, যা একাত্তরে দলটির মানবতাবিরোধী অপরাধের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

নীলফামারী জেলার এরকম একটি আক্রান্ত সংখ্যালঘু এলাকা পরিদর্শন শেষে গত শনিবার ঢাকায় ফেরার পথে স্থানীয় সাংসদ ও জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ অভিযান চালালে, তারাও পাল্টা আঘাত হানে এবং দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। এটি চোরাগোপ্তা নয়, পরিকল্পিত হামলা।
এখানে সরকারের ব্যর্থতার দিকটিও স্পষ্ট। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী যে আরও ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হতে পারে, সেটি কি সরকারের নীতিনির্ধারকেরা জানতেন না? জানলে কেন তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেন না?
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বুঝতে হবে যে, তাদের কাঁধে ভর করে মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও এর জনগণের বিরুদ্ধে আক্রোশমূলক সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইছে। এখন বিএনপিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা সেই যুদ্ধে কোন পক্ষে থাকবে?

একতরফা নির্বাচন সমাধান নয়- তারানকোর সফর

Friday, December 13, 2013

বাংলাদেশের প্রত্যেক শান্তিকামী মানুষেরই প্রত্যাশা ছিল, জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগটি সফল হবে। বিশেষ করে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের যখন একসঙ্গে বসাতে পেরেছেন,
তখন নির্বাচন নিয়ে তাঁরা একটি মীমাংসায় আসতে পারবেন। কিন্তু তারানকো তাঁর বিদায়ী প্রেস ব্রিফিংয়ে দুই দলকে একসঙ্গে বসানো ছাড়া কোনো আশার খবর শোনাতে পারেননি। এটি দেশ ও জনগণের জন্য চরম হতাশাজনক।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরই সমাধান করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রধান দুই প্রতিযোগী যদি কোনো বিষয়েই একমত না হতে পারেন এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করেন, তাহলে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আশা করা কঠিন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে যে অচলাবস্থা চলে আসছিল, তার সহিংস রূপ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অচল এবং জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। সরকার যেমন সংবিধান রক্ষার নামে ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী একটি যেনতেন নির্বাচন করার ব্যাপারে কৃতসংকল্প, তেমনি বিরোধী দলও সেই নির্বাচন ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। আর দুই পক্ষের এই কাজিয়ার শরিক না হয়েও সাধারণ মানুষকে তার শিকার হতে হচ্ছে। আরও দুর্ভাগ্যজনক যে, রাজনৈতিক বিবাদের সুযোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিশেষভাবে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির সারা দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নৈরাজ্য চালানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের সাঁড়াশি ও সর্বাত্মক আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। প্রশ্ন হলো, যে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকার কীভাবে জনগণের নিরাপত্তা দেবে?

দুর্ভাগ্যজনক যে দুই প্রধান দলই তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমন শক্তির সঙ্গে আঁতাত করছে, যাদের এ দেশের মানুষ একাত্তরে পরাজিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এবং নব্বইয়ে উৎখাত করেছিল স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে।

জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের মানুষ অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। কিন্তু ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দলীয় সরকারের দাবি মানা হলেই কেবল আন্দোলনের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। অন্যদিকে, সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিলেও কীভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারা অংশ নিতে পারবে, সে ব্যাপারে কিছুই বলছে না।

এই অবস্থায় সংঘাত অনিবার্য এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। দেশ ও জনগণের হেফাজতকারী হিসেবে সরকার এই সংঘাতের দায় এড়াতে পারে না। তাই একতরফা নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে সরকারের উচিত সবার অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

৫০টি পদের গ্রেড উন্নতি অনৈতিক- নির্বাচনকালীন সরকার

Wednesday, December 11, 2013

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও জনপ্রশাসনের ৫০টি পদের গ্রেড উন্নীত করার সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া মনোভাবকে আরও বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে।
তাদের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বজনীন ধ্যান-ধারণার পরিপন্থী। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি দুর্বল হিসেবে সমালোচিত নির্বাচন কমিশন যে আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, এটা তার সঙ্গেও কার্যত সংগতিপূর্ণ নয়।

এটা পরিহাসমূলক যে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি প্রণয়নের পরে তা লঙ্ঘনের অভিযোগে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে আদৌ নৈতিক কর্তৃত্ব খাটাতেও উদ্যোগী হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। অথচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটা অভাবনীয় যে, দলীয়করণের প্রবল সমালোচনা সত্ত্বেও সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতেই বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের ৩৩টি পদকে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ১ এবং আরও ২০টি পদকে গ্রেড ২-এ উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত সন্দেহাতীতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, তফসিল ঘোষণা করার পরে তিনি কেবল রুটিন কাজ করবেন, নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবেন না। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সরকারের প্রশাসন চালানোর জন্য জরুরি নয়। কারণ, যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে ২০১২ সালের অক্টোবরে নেওয়া হয়েছিল। সুতরাং যে কাজ এক বছর ধরে পড়ে ছিল, তা নির্বাচনের আগেই, বিশেষ করে নির্বাচন মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নাটকীয়ভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজন ছিল না।

বিশেষ করে দলীয় সরকারের প্রশাসনও যে চাইলে দলনিরপেক্ষ আচরণ দেখাতে পারে, সে রকম উদাহরণ নেই বললেই চলে। অথচ পারস্পরিক আস্থা অর্জন তো বটেই, জাতীয় অগ্রগতি ও গণতন্ত্র উন্নয়নের জন্যও তা অপরিহার্য। আমরা যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে থাকি, কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দলীয় সরকারকে সব পরিস্থিতিতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকার বিষয়ে তাদের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়া রপ্ত করতে হবে। ক্ষমতা আছে বলেই তার অপব্যবহার কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ক্ষমতাসীন সরকার যদি নির্বাচনী প্রশাসনকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং নির্বাচন কমিশন যদি তা প্রতিরোধে ক্রমাগত অক্ষমতা ও অসামর্থ্যের পরিচয় দিয়ে চলে, তাহলে বিরোধীদলীয় সমালোচনা এবং তাদের উদ্বেগ জনগণের সামনে আরও বৈধতা পেয়ে চলবে।
আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে তার মর্যাদা ও অবস্থান সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে। অন্যথায় নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের বিতৃষ্ণা ও বিরূপ মনোভাব ক্রমাগত বেড়ে চলবে।

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু