Home » , , » পহেলা মে ।। শাহাদাত হোসাইন সাদিক

পহেলা মে ।। শাহাদাত হোসাইন সাদিক

Written By Unknown on Saturday, April 30, 2011 | 9:55 PM

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
মে দিবস নামেও পরিচিত। মে মাসের প্রথম দিনটিকে পৃথিবীর অনেক দেশে পালিত হয়। বেশকিছু দেশে মে দিবসকে লেবার ডে হিসাবে পালন করা হয়। এদিনটি সরকারীভাবে ছুটির দিন।

পহেলা মে
সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সংগ্রামী ঐতিহ্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের এক স্মরনীয় ও আন্তর্জাতিক এবং সংহতির উদযাপনের এক অনন্য দিন  মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এই দিবসটি শ্রেনী বৈষম্যের অবসানের লক্ষ্যে সংকল্পবদ্ধ ও সংগঠিত হয়। ১ মে শুধু একটি দিবসই নয়, একটি ইতিহাস, একটি ঘটনা। ১৮৮৬ সালের ১লা মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর শহরে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, মজুরি বৃদ্ধি তথা ন্যায্য মজুরি, কাজের উন্নত পরিবেশ ইত্যাদির দাবিতে ১লা মে একটি শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ধর্মঘটে প্রায় ৩ লক্ষ শ্রমিক যোগ দেয়। বর্বর  ও পিশাচিক পন্থায় সে ধর্মঘট দমন করা হয়। শ্রমিকদের এক সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায় এর ফল স্বরূপ পরের দিন সে মার্কেটে শ্রমিকরা প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হলে কারখানার মালিকরা সেখানে বোমা বিস্ফোরন ঘটায়, ফলে শ্রমিক নেতাসহ ১১জন প্রাণ হারায়। সংঘটিত ঘটনা ও পরবর্তী ঘটনাবলী থেকে এই দিবসের উৎপত্তি।
পূর্বে শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রম করতে হত,
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন। বিপরীতে মজুরী মিলত নগণ্য, শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করত, ক্ষেত্রবিশেষে তা দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়ত। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের ১লা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণ এ দাবী মেনে নিল না। ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশবাহিনী তৎক্ষনাত শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা ভয়বহতায় রূপ নেয়। এতে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাকে পরে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, "আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে"। ২৬শে জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন, এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১লা মে  বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে “মে দিবস” বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস”। পহেলা মে সেই আন্দোলনের কথাই আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয়। ১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেনী কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে। রাশিয়াসহ  পরবর্তীকালে আরো কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে। জাতিসংঘে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসাবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (অরগানাইজেশন বা আই .ত্রল.ও) প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ স্বীকৃতি লাভ করে এবং সকল দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহবান জানায়। এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ আই.এল.ও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেনীর প্রাধান্যের কারনে অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক দেশে বেশ গুরুত্বও সংকল্প সহকারে মে দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে মে দিবসে সরকারি ছুটি পালিত হয়। এখানে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়।

দেশে অতীতকাল থেকে এখনও পর্যন্ত শ্রমিক নিযার্তন চলছে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে যেই নিযার্তন আমরা দেখি তা হলো শ্রমিককে গালাগাল করা, মানসিক টেনশনে রাখা, হুমকি দেয়া কোনো কোনো পর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন করতেও দেখা যায়। গার্মেন্টসসহ অনেক ক্ষেত্রে ৮ ঘন্টার পরিবর্তে বিনা ওভারটাইমে ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করানো হয় ১২ ঘন্টা কাজ করিয়ে বেতন দেয় ৮ ঘন্টার। শ্রমিক আইনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ ঘন্টা কাজ করার কোন বিধান নেই। কোন কোন শিল্প-কারখানার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করায়, এমনকি মে দিবসের প্রচলিত ছুটি থেকেও তারা বঞ্চিত।

বিশ্বের দেশে দেশে নির্বাচিত শোষিত শ্রমিকশ্রেনী নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে এখনো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ন্যুনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত। বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেনীর হাজারো সমস্যা। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ উন্নত বিশ্বের শ্রমিকদের মতো সুযোগ-নিরাপত্তা কাজের পরিবেশ এখনো পায়নি, এদেশের শ্রমিকদের অথনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। নারী ও শিশু শ্রমিকরা শোষণের শিকার হচ্ছে, কর্মস্থলে নির্যাতন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সেখানকার নারী নিযার্তনের ধরন ও প্রকৃতি সামাজিক নারী নির্যাতন থেকে একেবারেই আলাদা।

আমরা আজকের এই স্মৃতিময় দিনে দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সঙ্গে এক হয়ে শিকাগোর সেই আতœত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণ করি, নিবেদন করি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

তথ্য সূত্র ঃ
উইকিপিডিয়া
মে দিবস- আয়েশা খাতুন।


0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু