Home » , , » যানজট ও ট্রাফিক আইন by মেরীনা চৌধুরী

যানজট ও ট্রাফিক আইন by মেরীনা চৌধুরী

Written By Unknown on Tuesday, January 4, 2011 | 3:03 AM

টা সবার জানা বিদেশে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলে। সেখানে ট্রাফিক আইন ভাঙার সাজা এতই কঠোর যে, সবাই এ বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকায় সবই উল্টো। এদেশে ট্রাফিক আইন মেনে না চলাই যেন আইন। তাই ঢাকা শহর এখন যানজটের শহর।
গাড়ি, রিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব যে কোন যানে উঠে বসুন না কেন, গন্তব্যে কখন পৌঁছাবেন জানেন না, আধঘন্টার রাস্তা কখনও কখনও দেড়-দু ঘন্টাও লেগে যায়। হূদরোগী, ডেলিভারি কিংবা মুমূষর্ু রোগীকে নিয়ে যানজটে আটকা পড়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি এমন লোক কমই আছেন। অথচ নিয়ম মেনে পথ চললে বা গাড়ি চালালে যেমন অপ্রীতিকর ঘটনা অর্থাৎ অ্যাক্সিডেন্ট বা অন্য কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তেমনি নিজের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে, কেবল তাই-ই নয় শহরকেও রাখা যায় জ্যামমুক্ত ছিমছাম। আজকাল পথে-ঘাটে, বাসা-বাড়ি, অফিস-রেস্তোরাঁ, ক্লাবের আড্ডায় ট্রাফিক জ্যাম একটি আলোচনার মুখ্য বিষয়। যারা বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছান, অফিসে যান তারা সত্যই এক অতি বিড়ম্বনার শিকার হন। এক্ষেত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই দোষ দেন গাড়ি চালকের। আবার যারা নিজেই চালক তারা পথচারীর পথ চলার ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে সোচ্চার হন। তারা কখনই ভাবেন না এক্ষেত্রে তাদেরও কিছুটা হলেও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। অর্থাৎ ট্রাফিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক তা মনে রাখতে হবে সবাইকে। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী আমাদের দেশের নাগরিকদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথমটি গাড়ির চালক, অন্যটি পথচারী। স্বভাবতই দুই শ্রেণীর জন্য রয়েছে দুই রকমের নিয়ম-কানুন। গাড়ির (যেকোনও) চালককে নির্দিষ্ট গতিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালানো নিষেধ। নির্ধারিত পার্কিং জোন ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করতে পারবে না। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা বাধ্যতামূলক। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কর্মরত পুলিশ যদি চালককে কিছু নির্দেশ দেয় তিনি তা মানতে বাধ্য। বিশ বছরের পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামানোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। অর্থাৎ বিশ বছরের পুরনো গাড়ি রাস্তায় চলাচল করা নিষিদ্ধ।

সর্বশেষ ট্রাফিক আইনের আওতায় চালককে গাড়ি চালানো অবস্থায় অবশ্যই সিটবেল্ট বাঁধতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় কোনক্রমেই চালক মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন না। মোটর সাইকেল চালক ও সহযাত্রীকে হেলমেট ব্যবহার করাও বাধ্যতামূলক। সব ধরনের গাড়ির কাগজপত্র সর্বদা চালককে গাড়িতে রাখতে হবে। রাস্তায় যে কোনও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ দেখতে চাইলে তা দেখাতে বাধ্য চালক। এছাড়া পরিবেশ দূষণরোধেও কিছু নিয়ম-কানুন বা আইন আছে। এটা দেখাশোনাও ট্রাফিক আইনের আওতাভুক্ত। বাস, লরি, ট্রাক, মিনিবাস, গাড়ি ইত্যাদি চালানোর সময় শহরের ভিতরে অযথা হর্ন বাজাতে পারবে না। শব্দ দূষণরোধে এই আইন করা হয়।

যেসব রাস্তায় নির্দিষ্ট গতিবেগের চেয়ে গাড়ি চালানো নিষেধ অবাধে তা লংঘন করে গাড়ি চলে। উপরে সাইনবোর্ড ঝোলানো" 'গাড়ি পার্কিং' নিষেধ। সেখানে লাইন দিয়ে গাড়ি পার্ক করা থাকে। এমন কি রাস্তার দু'পাশে গাড়ি পার্ক করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে যে, জনগণকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে সকালে স্কুল ও অফিসের সময়। হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ এলাকা তো বটেই, যানজটের কারণে গাড়ি সামনে এগোতে পারবে না জেনেও মুহুমর্ুহু হর্নের আওয়াজে কানপাতা দায়। হর্নের এই শব্দ শুধু শব্দ দূষণই করে না, মাথা, কান সব ইন্দ্রীয়তে আঘাত করে মানুষকে অসুস্থ করেও তোলে।

হেলমেট ছাড়া মটর সাইকেল চালানো নিষেধ, মোবাইল ফোনে কথা বলা, সিটবেল্ট বাঁধা কোনটাই মানা হয় না, বিশ বছর কেন পঞ্চাশ বছর আগের লক্কর-ঝক্কড় মার্কা বাস নিয়মিত রাস্তায় চলছে। এছাড়া পথচারীদের রাস্তা পারাপারের নির্দিষ্ট স্থান বা জেব্রাক্রসিং, ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ব্যস্ত সড়কের যত্রতত্র থেকে রাস্তা পার হচ্ছে পথচারী।

''ওয়ান ওয়ে" রাস্তারও একই হাল। তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ''ওয়ান ওয়ে" হোক, রিকশা ফ্রি রাস্তা হোক, রং সাইড দিয়ে বা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দ্বিধাবোধ করছে না। মাঝে-মধ্যে অথবা ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের সময় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়। কিছুদিন পরই এই তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। আবার আইন না মেনে চলতে শুরু করে। এক্ষেত্রে এককভাবে গাড়ির চালক বা পথচারী কাউকে দোষারূপ করা উচিত নয়। ট্রাফিক আইন কার্যকরী করতে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নগর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্ঘটনা কমিয়ে যানজটমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুবিধার্থে ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিন্তকরণ জরুরী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নগর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যখন ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয় তখন এবং মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিছুদিন পরই আবার সব চুপচাপ, পুরনোরূপে ফিরে রাজধানী। গত ১ নভেম্বর পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছিল পুলিশ, কিন্তু এখন সে উদ্যোগ বজায় রাখার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চালানো হয়েছিল। বর্তমানে কালো ধোঁয়ার গাড়িও রাস্তায় চলছে নির্বিঘ্নে। পথচারী, গাড়ির চালক হরহামেশাই নিষিদ্ধ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। যদিও এক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে পুলিশকে 'সন্তুষ্ট' করতে পারলেই আইন অমান্য করা সম্ভব।

সর্বশেষে বলতে হয়, সবাইকে সচেতন হয়ে আইন মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন একবার মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে নিজেরাই হাতে-নাতে এর সুফল বুঝতে পারবে। পথচারী এবং গাড়ি চালক উভয়ের ক্ষেত্রে যেমন একথা সত্য, তেমনি কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ যদি ট্রাফিক আইন জনগণকে মানতে বাধ্য করেন তাহলে তাদের প্রতি কেউ ''সন্তুষ্ট'' করা বলে যে অভিযোগ করা হয় সে অভিযোগও কেউ করতে পারবে না সে কথাও সত্য।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু