Home » , » গহিন বনে যুবলীগ নেতার ইটভাটা by সুনীল বড়ুয়া

গহিন বনে যুবলীগ নেতার ইটভাটা by সুনীল বড়ুয়া

Written By Unknown on Thursday, December 30, 2010 | 12:26 PM

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গহিন বনে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ইটভাটা। এই ভাটার ইট তৈরি হচ্ছে পাহাড় কেটে। ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে বনেরই গাছ। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।
নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কের বিছামারা এলাকায় পাহাড় আর সবুজ গাছপালার মাঝে ‘জেড আর সি’ নামের এই ইটভাটা গড়ে তুলেছেন উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক জহির আহম্মদ।

এতে টিন দিয়ে বানানো হয়েছে চিমনি, যা পরিবেশসম্মত নয় এবং যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে বিছামারা এলাকায় সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে প্রায় আট একর জমির ওপর ইট তৈরি এবং পোড়ানোর কাজ চলছে। চারপাশে উঁচু পাহাড় আর সবুজ গাছপালার মধ্যে ভাটাটি করা হয়েছে। সড়কের উত্তরে ইট পোড়ানো এবং দক্ষিণে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের এক-তৃতীয়াংশ কেটে সমান করে সেখানে ইট তৈরি করা হচ্ছে। সড়কের মাত্র ১০ গজ দূরে স্থাপিত ভাটার চুলায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে দেখা যায়। ইট বানানোর কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক জানান, গত নভেম্বর থেকে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। এক দফায় পাঁচ লাখ ইট পোড়ানো হয়। তাই কাঁচা ইট তৈরির জন্য বিপুল পরিমাণ মাটির দরকার পড়ে। পাহাড় কাটা মাটি দিয়েই ইট তৈরি করা হয়েছে।
এ সময় কাজ তদারকি করছিলেন ভাটার মালিক জহির আহম্মদ। এই ইটভাটার যথাযথ অনুমোদন এবং বৈধ কাগজপত্র নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা-আছাড়তলি সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশে গত বছর ইট বিছানোর কাজ শুরু হয়। সরকারের ব্যয় কমাতে জেলা প্রশাসক গত বছর ওই ইটভাটায় ইট তৈরির অনুমতি দেন। ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ ভাটায় পরিবেশবান্ধব জিগজাগ চিমনি করার পরিকল্পনা আছে। সে জন্য প্রায় দুই লাখ ইট লাগবে। বনের কাঠ প্রকাশ্যে পোড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, কয়লা দিয়ে এখানে পোষানো যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত একটি ইটভাটায় প্রায় ছয় দফায় ইট পোড়ানো যায়। প্রতিবারে চার-পাঁচ হাজার মণ কাঠ লাগে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বিপুল পরিমাণ কাঠের জোগান দিতে আশপাশের বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে। ভাটার মালিক টাকার বিনিময়ে বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে পক্ষে নিয়ে এই অবৈধ ইটভাটা চালাচ্ছেন।
বন বিভাগের নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, টাকার বিনিময়ে ইটভাটার মালিকের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি সত্য নয়। তিনি যোগ দেওয়ার আগে এসব (পাহাড় কাটা) হয়েছে। আর কাঠ পোড়ানো হয় বনকর্মীদের অগোচরে।
আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম সোহেল প্রথম আলোকে জানান, ওই ইটভাটা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। কেউ অভিযোগও করেনি। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, ‘নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় ইটভাটা হতেই পারে না। ওই ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রও নেই। পত্রপত্রিকায় অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে ওঠার খবর পেয়ে আমরা ইতিমধ্যে ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও বরাবর চিঠি দিয়েছি।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার উন্নয়নকাজের জন্য ইটের দরকার আছে। কিন্তু অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
সড়কের উন্নয়নকাজের জন্য ইট তৈরির অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার মনে পড়ছে না। আর গত বছর অনুমতি দেওয়া হলেও এত দিনে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ভাটাটি বন্ধ করতে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু