Home » , » বিশ্বকাঁপানো উইকিলিকসঃ স্বচ্ছতা ও কৌশলের কাছে দাপটের পরাজয়

বিশ্বকাঁপানো উইকিলিকসঃ স্বচ্ছতা ও কৌশলের কাছে দাপটের পরাজয়

Written By Unknown on Thursday, December 9, 2010 | 3:49 AM

স্বাধীন সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো, বিশেষত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান লড়াইটি পৌরাণিক ডেভিড ও গলিয়াথের লড়াইয়ের চেহারা পেয়েছে। সেই গল্পে খুদে ডেভিড পরাক্রমশালী গলিয়াথকে কৌশলে পরাজিত করেছিল। একইভাবে উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যেন সাম্রাজ্যের গোমর ফাঁস করতে নেমেছেন এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছেন। তাঁর ফাঁস করে দেওয়া প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক নথি বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু রাষ্ট্রের পরিচালকদের ভাবমূর্তি ভয়ানকভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পরও উইকিলিকস তার কাজ অব্যাহত রাখায় প্রমাণিত হয়, কৌশলের কাছে শক্তির দাপট অকার্যকর হচ্ছে।

কার্যত, উইকিলিকস এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ আনা কঠিন। তিনি মার্কিন নাগরিক নন বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁর বিচার করা যাবে না। অন্যদিকে, তিনি যে তথ্যভান্ডার ফাঁস করেছেন, সেই একই তথ্যভান্ডার প্রকাশ করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, জার্মানির ডার স্পিগেল, ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান, স্পেনের এল পাইস-এর মতো সংবাদমাধ্যম। উইকিলিকসকে গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ করতে গেলে এসব নামকরা গণমাধ্যমকেও অভিযুক্ত করতে হয়। সেটা সম্ভব না হওয়ার কারণেই সম্ভবত তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, যিনি সেই অভিযোগ করেছেন, তিনি একসময় সিআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের সরকার মিথ্যা দাবি করেনি। যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া গণতন্ত্র কার্যকর হয় না, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সত্য প্রকাশ তাতেই ভূমিকা রেখেছে। জনগণের জানার অধিকার মান্য করলে, অ্যাসাঞ্জকে খলনায়ক নয় বরং বীরই মনে হবে। যে যুক্তরাষ্ট্র মতপ্রকাশের অধিকারের কথা বলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমালোচনা করে, চীনের গুগল সার্চ ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা করে, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন উইকিলিকসের ওয়েবসাইট, তহবিলসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে নগ্নভাবে স্ববিরোধিতা করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার এবং কানাডাসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের আইনপ্রণেতারা প্রকাশ্যে যেভাবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন, তাতে তাঁদের বিষয়ে উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যগুলোই আবার প্রমাণিত হয়।
উইকি-কাণ্ডের আসল দিক হলো তথ্যবিপ্লবের এ যুগে নতুন তথ্যযুদ্ধের প্রথম বৈশ্বিক মহড়া। এত দিন রাষ্ট্র ও করপোরেশন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে তথ্য চুরি করেছে, এখন ব্যক্তি নিজেই ক্ষমতাবান সরকার ও করপোরেশনের মুখোশ খুলে দিচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, পাল্টা সাংবাদিকতার এই আক্রমণের মুখে পরাশক্তির সব ক্ষমতা ও নিরাপত্তা ভঙ্গুর বলেও দেখা গেছে। বলা যায়, এ ঘটনা করপোরেট গণমাধ্যম ও সরকারি ব্যর্থতার মুখে নাগরিক নজরদারি ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রয়োজনকেই আরও ওপরে তুলে ধরেছে। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী অজস্র মানুষ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
আমরা চাই, উইকিলিকস চালু থাকুক, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং রাষ্ট্রগুলোর আচরণ আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে চলুক। পাশাপাশি, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াতেই হোক; তিনি যেন কোনোভাবেই প্রতিহিংসার শিকার না হন। কেননা, তাতে জনগণের জানার অধিকারই আহত হবে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু