Home » , » গদ্যকার্টুনঃ অল্প স্বল্প গল্প

গদ্যকার্টুনঃ অল্প স্বল্প গল্প

Written By Unknown on Tuesday, December 7, 2010 | 6:11 AM

ই কৌতুকটা মার্কিন রাজনীতি নিয়ে। ওই দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটো। রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাট। দুজন আমেরিকান রাজনীতিক গেছেন বনের ধারে তাঁবুবাস করার জন্য। একজন রিপাবলিকান আর একজন ডেমোক্র্যাট। তাঁরা পাশাপাশি তাঁবু গাড়লেন। রিপাবলিকান ভদ্রলোক তাঁর সঙ্গে এনেছেন দুই ধরনের ছুরি আর একটা বন্দুক। সঙ্গে আরও আছে রান্না করার কড়াই। আর ডেমোক্র্যাট ভদ্রলোক এনেছেন বিখ্যাত প্রামাণ্য ছবি ফারেনহাইট ৯/১১-এর ডিভিডি। মাইকেল মুরের এই ছবিটি ভীষণভাবে বুশবিরোধী।তাঁবুবাস শুরু হলো।
এ সময় একটা নেকড়ে আক্রমণ করায় দুজনেই মারা গেলেন।
মৃত্যুর পর তাঁদের জিজ্ঞেস করা হলো, আশ্চর্য তো, তোমাদের হাতে এত অস্ত্র ছিল, বন্দুক ছিল, ছুরি ছিল, তার পরও তোমরা বাঁচার চেষ্টা করলে না কেন?
ডেমোক্র্যাট বললেন, নেকড়েটাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি বন্দুকটা হাতে নিলাম। তখন আমার মনে হলো, বন্দুক হলো একটা ডানপন্থী অস্ত্র। একজন ডেমোক্র্যাট হয়ে আমি এটা ব্যবহার করতে পারি না। তারপর আমি একটা ছুরি হাতে নিলাম। নেকড়েটার ওপরে চড়াও হতে যাব, তখন মনে হলো, নেকড়ে হলো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। একে আমি মারতে পারি না। তখন ভাবলাম, কড়াইটার ওপর কাঠ দিয়ে বাড়ি দিয়ে শব্দ করি। তাহলে নেকড়েটা পালাবে। তখন মনে হলো, এখন যদি আমি শব্দ করি, তাহলে পরিবেশদূষণ হবে।
আর তারপর মনে হলো, এই যে কাঠগুলো আনা হয়েছে রান্নার জন্য, এতে কার্বন নিঃসরিত হবে। পৃথিবীর জলবায়ুর ক্ষতি হবে। তখন আমি জ্বালানি কাঠগুলো সব বনের ভেতরে ছুড়ে মারলাম। আর কড়াইটাকে ছুড়ে মারলাম আরেক দিকে।
তার পরও তোমার হাতে তো ফারেনহাইট ৯/১১-এর ডিভিডিটা ছিল। তুমি তো ওটা চালাতে পারতে।
আসলে আমি তাই করছিলাম। আমি যখন ছবিটা চালাতে লাগলাম, তখন এতই আত্মহারা হয়ে গেলাম যে নেকড়ে আমাকে খেয়ে ফেলল।
আচ্ছা, আর রিপাবলিকান, তুমি মারা গেলে কীভাবে? তুমি তো আর বন্দুক চালাতে দ্বিধা কর না।
রিপাবলিকান বলল, ঠিক তাই। নেকড়েটা যখন ডেমোক্র্যাটটাকে আক্রমণ করল, আমি তাতে বাধা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।
তোমার নিশ্চয়ই একটা নেকড়ে মারতে বিবেকে বাধে, না?
বিবেক? একটা নেকড়ের জন্য সহানুভূতি। এসব থাকলে আমি রিপাবলিকান কেন?
তাহলে তুমি কী করলে?
আসলে নেকড়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসতেই বন্দুক তুলে নিয়ে আমি ট্রিগারে চাপ দিই। নেকড়ে মারা যায়।
তাহলে তুমি মারা গেলে কীভাবে?
আসলে ডেমোক্র্যাটটা আমার রান্নার কড়াই আর কাঠগুলোকে ছুড়ে মেরেছিল। আর আমি বাধ্য হয়েছিলাম নেকড়ের মাংস রান্না না করেই ভক্ষণ করতে। সেই অখাদ্য সহ্য করতে না পেরে আমি মারা যাই।
গল্পটার মধ্যে তেমন মজা নেই। কিন্তু দুই দলের রাজনৈতিক প্রবণতাগুলো এই গল্পে তীব্রভাবে উপস্থিত।
ভাবছি, গল্পটাকে বাংলাদেশের উপযোগী করতে হলে কী করতে হবে।
আওয়ামী লীগ আর বিএনপির দুজন বনে গেছেন বনের ধারে বনভোজন করতে।
এ সময় একটা বাঘ এল।
আওয়ামী লীগার বন্দুক তুললেন, তখন তাঁর মনে পড়ল, শেখ হাসিনা কেবল বাঘ সম্মেলন থেকে ফিরেছেন। একজন আওয়ামী লীগার হয়ে বাঘ তিনি মারতে পারেন না।
তখন তিনি ভাবলেন, বাঘটাকে তাড়িয়ে দেওয়া দরকার। তিনি বন্দুক দিয়ে ফাঁকা আওয়াজ করতে লাগলেন।
বিএনপির রাজনীতিক বলে উঠলেন, ফাঁকা আওয়াজ, ফাঁকা আওয়াজ। বাঘ আওয়ামী লীগারকে খেয়ে ফেলল।
তখন বিএনপির ভদ্রলোক বন্দুক চালিয়ে বাঘটাকে মেরে ফেললেন। তারপর বাঘটাকে রান্না করেই খেয়ে ফেললেন। তাহলে তিনি মারা গেলেন কেন? কারণ বাঘের পেটে আওয়ামী লীগার ছিলেন। বিএনপির পক্ষে আওয়ামী লীগকে হজম করে ফেলা সম্ভব নয়।
এটা স্রেফ গল্প। এটা নিয়ে বেশি কিছু না ভাবাই ভালো।
আরেকটা গল্প।
প্রেসিডেন্ট বুশ তাঁর নিজের এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণ করছেন। দেখলেন, একটা বাচ্চা ছেলে কতগুলো সদ্য জন্ম নেওয়া কুকুরের ছানা নিয়ে পথের ধারে খেলছে। বুশ জিজ্ঞেস করলেন, বাবু, তোমার কুকুরছানাগুলো রিপাবলিকান, নাকি ডেমোক্র্যাট?
রিপাবলিকান। বালক জবাব দিল।
বুশ খুশি হয়ে বিদায় নিলেন।
কয়েক দিন পর আবার সেই বালকের সঙ্গে একই জায়গায় বুশের দেখা। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, বাবু, তোমার কুকুরছানাগুলো রিপাবলিকান, নাকি ডেমোক্র্যাট?
ছেলেটা জবাব দিল, ডেমোক্র্যাট।
বুশ আশাহত হয়ে বললেন, কয়েক দিন আগেই না বললে ওরা রিপাবলিকান?
হ্যাঁ, তখন ওরা রিপাবলিকান ছিল।
আর এখন?
ওরা ডেমোক্র্যাট হয়ে গেছে।
কী করে?
কারণ এই কদিনে ওদের চোখ ফুটে গেছে।
আমেরিকা থেকে আবার দেশে আসি। দেশের খবর হলো, বিএনপি বলে দিয়েছে তারা জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে যাবে না।
কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবে যে বেতন তাঁরা পান, সেটা কি তাঁরা উত্তোলন করবেন?
আর উপজেলা চেয়ারম্যানরা বলেছেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে তাঁরা আমরণ অনশন করবেন।
আমাদের নেতারা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার চান না কেন?
আচ্ছা, এই কৌতুকটা বলে শেষ করে দিই। তিনজন স্বর্ণকেশিনী বরফঢাকা এক নির্জন প্রান্তরে আটকা পড়েছে। তাদের গাড়ি অচল হয়ে পড়েছে। তুষারপাতের কারণে ওই রাস্তা বন্ধ। এই সময় ওরা একটা প্রদীপ কুড়িয়ে পেল। সেটাতে ঘষা দিতেই বেরিয়ে এল আলাউদ্দিনের দৈত্য। সে বলল, তোমরা তিনজন। প্রত্যেকে একটা করে হুকুম দাও। আমি তালিম করব।
প্রথমজন বলল, আমাকে আমার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
একটু পরে দেখা গেল, বাড়িতে নিজের বিছানায় সে শুয়ে আছে।
দ্বিতীয়জন বলল, আমাকে একটা রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাও।
সে দেখতে পেল, একটা রাজপ্রাসাদের ভেতরে সে প্রবেশ করেছে।
তৃতীয়জন বলল, আমার খুব একা একা লাগছে। ওদের দুজনকে ফিরিয়ে আনো।
এটা হলো বোকামির গল্প।
কিন্তু জাতীয় সংসদ থেকে সংসদ সদস্যদের বের করে আনতে পারলে আসলে কার লাভ হবে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু