Home » , , , » বন্ধ হোক দূষিত রক্তের কেনাবেচা by ডা. ডালিয়া নাসরীন লোপা

বন্ধ হোক দূষিত রক্তের কেনাবেচা by ডা. ডালিয়া নাসরীন লোপা

Written By Unknown on Monday, January 3, 2011 | 9:55 PM

বেঁচে থাকার জন্য রক্তের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করতে এবং শরীরে আনুষঙ্গিক পুষ্টি পেঁৗছানোও রক্তের কাজ। এছাড়াও গস্নুকোজ, হরমোন এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের একস্থান হতে অন্যস্থানে পেঁৗছায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে।

এই রক্ত আবার বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। রক্তরস এবং রক্তকণিকা, যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতকণিকা এবং অনুচক্রিকা। গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে বা মুমূষর্ু রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন হয় রক্তের। ভুক্তভোগীরাই জানেন রক্ত জোগাড় করার ঝক্কি ঝামেলা। ক্ষেত্রবিশেষে কিংবা অসুখের প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ রক্ত, পোড়ারোগীর জন্য শুধুমাত্র পস্নাজমা, ডেঙ্গুজ্বরে অনুচক্রিকা বা পস্নাটিলেট রোগীর দেহে সঞ্চালন করা হয়।

বস্নাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত পরিসঞ্চালন বলতে রক্ত অথবা এর বিভিন্ন উপাদান রোগীর শরীরে প্রবেশ করানোকে বুঝায়। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮.১ কোটি ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২.৭ কোটি ইউনিট সংগ্রহ করা হয় স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশের যেখানে বিশ্বে প্রায় ৮০-৮২ ভাগ লোকের বসবাস। বিশ্বে প্রায় চার কোটি রক্তদাতা বছরে দু'বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করে থাকেন, যার মধ্যে ৯০ ভাগ রক্তদাতা উন্নত বিশ্বের। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার ০.০৪ শতাংশ, যেখানে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা হওয়া দরকার দুই শতাংশ।

যেসব কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে:হঠাৎ দুর্ঘটনায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে, ডেঙ্গুজ্বর, মেজর সার্জারীর পূর্বে রক্তশূন্যতা থাকলে, ক্রনিক ইনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থাকলে, যেমন বিস্নডিং পেপটিক আলসার, ক্রিমিজনিত প্রদাহ বা 'হুক' ওয়ার্মের কারণে। পাইলস, হেমোলাইটিক এনিমিয়া প্রভৃতি কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও বস্নাড ক্যান্সার, থ্যালাসিমিয়া, হেমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন সত্যি যেন এক দুর্লভ ব্যাপার। সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়, 'অবৈধ বস্নাড ব্যাংকে দূষিত রক্তের রমরমা ব্যবসা চলছে প্রকাশ্যে'" ব্যাপারটি সত্যিই উদ্বেগজনক। যদিও এটা কোন নতুন বিষয় নয়। প্রয়োজনের সময় নিরাপদ রক্তের সহজ প্রাপ্তিতাই যেন দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। তথ্যমতে, রাজধানীর অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে বিপুলসংখ্যক লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি বস্নাড ব্যাংক। অবৈধ এসব বস্নাড ব্যাংকে পেশাদার রক্তদাতারা উচ্চমূল্যে রক্ত বিক্রি করছে। পেশাদার এই রক্তদাতাদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত এবং দেহে বহন করছে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি.সি.ই প্রভৃতি মরণ ব্যাধির ভাইরাস ও বিভিন্ন সংক্রামক জীবাণু। প্রকাশ্যে এসব অবৈধ লাইসেন্সবিহীন বস্নাড ব্যাংকে উচ্চমূল্যে কেনাবেচা হয়। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। এসব ক্ষেত্রে রক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডোনারদের কাছ থেকে রক্ত নেয়া হয় এবং বস্নাড ব্যাগের গায়ে ব্যবহারের কোন সময়সীমা উলেস্নখ থাকে না। এছাড়া বিভিন্ন দালাল শ্রেণীর যোগসাজশ থাকায় গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকেই ওই সব রক্ত ক্রয় করে এবং তা রোগীর গায়ে দেয়া হয়। কোন অবস্থাতেই তা ফেরতযোগ্য নয়। ফলে, অনেকেই পড়ে বিপাকে।

রাজধানীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৯টি বেসরকারি বস্নাড ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে: ল্যাব এইড হাসপাতাল, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, কিডনী ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এ্যাপোলো হাসপাতাল, গ্রীন ভিউ হাসপাতাল, স্কয়ার এবং আদ-দ্বীন হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশে ৯৭টি বস্নাডব্যাংক আছে। এগুলো প্রধানত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইন্সটিটিউট জেলা সদর হাসপাতাল। এছাড়া রয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত হেমোফিলিয়া সেন্টার। এসব সেন্টারে সরকারিভাবে নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। পেশাদার ডোনারদের রক্ত দেয়া সরকারি বস্নাড ব্যাংকে বন্ধ। এখানে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের স্বেচ্ছায় নিরাপদ রক্তদানে উৎসাহিত করা হয়। রক্ত দেবার সময় এবং রক্ত পরিসঞ্চালনের সময় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং টেস্ট যেমন, হেপাটাইটিস বি.সি.এইচ আইভি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া অবশ্যই করা বাঞ্ছনীয়। স্ক্রিনিং টেস্ট ছাড়া রক্তদান এবং রক্তগ্রহণ অনৈতিক। দেশে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের আইন থাকলেও তার কার্যকর কোন প্রয়োগ নেই। ৬ বছর পূর্বে এই আইন প্রণীত হলেও তা কার্যকর করার মত প্রয়োজনীয় বিধিমালা আজ পর্যন্ত প্রণীত হয়নি। নিরাপদ পরিসঞ্চালন আইন থাকলেও সেসঙ্গে কোন বিধিমালা না থাকার ফলে এই মারাত্মক সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। ফলে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সিফিলিস, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দিনদিন বেড়ে চলছে। মানুষের জীবন রক্ষা করার পরিবর্তে জীবনকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ সব পরিস্থিতির সামাল দেয়া প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্যের জন্য এই মারাত্মক হুমকি প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে অতিদ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সে সাথে প্রয়োজন নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে রক্তবাহিত রোগগুলি প্রতিরোধ করা এবং সুস্বাস্থ্যের নিশ্চিত বিধান করা।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু