Home » , , » সহিংস বিক্ষোভ, পুলিশ নিহত

সহিংস বিক্ষোভ, পুলিশ নিহত

Written By Unknown on Monday, January 31, 2011 | 2:24 PM

ড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার দিনভর এ বিক্ষোভে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হয়েছেন ৪০ পুলিশ সদস্য, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পাঁচ সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারী শতাধিক গ্রামবাসী।

বিক্ষুব্ধ জনতা হাঁসাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশের তিনটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের চারটি অস্ত্র ও ১৯টি গুলি লুট হয় বলে জানা গেছে।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান (৪৫)।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এবং ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় বিস্তৃত আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিল রক্ষা কমিটির ডাকে স্থানীয় জনতা গতকাল ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে। সকাল থেকে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল পাঁচটার পর যান চলাচল শুরু হয়।
আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির ব্যানারে এলাকাবাসী মাস খানেক ধরে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে আসছে। ২৬ জানুয়ারি ঢাকার মুক্তাঙ্গনে তাদের সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া এবং ওই দিন সংঘর্ষের ঘটনায় দুই হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে গতকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বলে জানান বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান বাদল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টা থেকে আড়িয়ল বিলের ওপর নির্ভরশীল তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ পৃথক মিছিল নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের হাতে ছিল লাঠি, কুড়াল, রামদা, গুলতি ও ঝাড়ু। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পুলিশ-জনতা দফায় দফায় সংঘর্ষে মহাসড়কের প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকাল আটটা থেকেই মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের মোড়ে ও ধলেশ্বরী সেতুর কাছেসহ তিনটি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ।
সকাল নয়টায় শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়ায় অল্প কিছু মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। অদূরে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডেও তখন খুব বেশি মানুষ দেখা যায়নি। সেখানে পুলিশের উপস্থিতির পাশাপাশি র্যাবের তিনটি গাড়ি টহল দিচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকে। এক ঘণ্টার মধ্যে ওই সড়ক জনতার দখলে চলে যায়। তখনো আশপাশের গ্রামের সড়ক দিয়ে লাঠি, দা হাতে নারী-পুরুষের খণ্ড খণ্ড মিছিল আসছিল। ১১টার মধ্যে ছনবাড়ী, হাসাড়া, শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের মাথায় সাদা কাপড়ের টুকরা বাঁধা ছিল। মুখে ছিল ‘আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর চাই না’ স্লোগান। গ্রামবাসী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে, করাতকল থেকে গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
১১টার দিকে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ছবিসহ ঝোলানো ব্যানার ও গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ এগোতে চাইলে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ও গুলতি দিয়ে মারবেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পেছন ফিরে দৌড় দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ দল ভারী করে এসে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগান থেকে গুলি করতে করতে এগোতে থাকে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
সাড়ে ১১টার দিকে পুুলিশের একটি জলকামান শ্রীনগরের দিক থেকে রঙিন পানি ছিটাতে ছিটাতে হাসাড়ার দিকে এগোতে থাকে। গ্রামবাসীও জলকামানের গাড়ির পেছন পেছন ধাওয়া করে। দ্রুত বেগে জলকামানটি ঢাকার দিকে চলে যায়। তখন গ্রামবাসী সামনে পড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রথম আলোর সাংবাদিকের একটিসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় তারা প্রথম আলোর প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা ও আলোকচিত্রী সাজিদ হোসেনের ওপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় এটিএন নিউজের আরাফাত সিদ্দিকী, বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যান সোহেল আরমান, দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রী শফিউদ্দিনও আহত হন।
কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশ গিয়ে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু হাজার হাজার গ্রামবাসী একযোগে পুলিশকে ধাওয়া দেয়। তারা সেখানকার পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ ও আগুন ধরিয়ে দেয়। ভেতরে আটকা পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। তখন পুলিশের ১৯টি গুলি লুট হয় বলে জানা গেছে।
কিছুক্ষণ পর আবার গ্রামবাসী এসে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি এবং রায়ট কারও বন্ধ হয়ে যায়। জনতা রায়ট কারের ওপর হামলা চালায়। তখন পুলিশ পিছু হটতে থাকলে জনতা কুপিয়ে ও পিটিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশকে আহত করে। এ সময় পুলিশের কাছ থেকে তিনটি শটগান ও একটি গ্যাসগান লুট হয়। এরপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঢাল পেটাতে পেটাতে এগোতে থাকলে জনতা সরে যায়। তারপর আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমানকে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বেলা আড়াইটার দিকে জনতা মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যায়। বিকেল পাঁচটার পর সড়ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষ থামার পর পর মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম, পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আহসান, শ্রীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল লতিফসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
সংঘর্ষে অন্যান্যের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল ইসলাম, তিন সহকারী পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম, দেওয়ান লালন আহমেদ ও সাহেদ ফেরদৌস আহত হন। মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের অন্তত ৪০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০ পুলিশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় এসআই মোস্তফা কামাল, হাবিলদার আবুল কালাম, নায়েক মফিজুল ইসলাম, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও কনস্টেবল মোহাম্মদ আজানকে। মিটফোর্ডে ভর্তি করা হয় হাবিলদার আবদুল হক, নায়েক গাজীউল ইসলাম, কনস্টেবল আলীমুদ্দিন, নজিউল্লাহ ও শাহাবুদ্দিনকে।
আহত গ্রামবাসীদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
মিটফোর্ডে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্য গাজীউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজারবাগ আর্মড পুলিশ বিভাগ থেকে তিনিসহ ছয়জন শ্রীনগর এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। উত্তেজিত প্রায় তিন-চার হাজার লোক তাঁদের ওপর হামলা চালায়। তারা গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে জনতা রাস্তায় মোটা মোটা গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তখন পুলিশ জনতার দিকে এগিয়ে গেলে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
মতিউরের লাশ নওগাঁয়: ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত নয়টার দিকে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা মতিউর রহমানের লাশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি নওগাঁয় পাঠানোর কথা। মতিউর নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চক আতিখা গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।
আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে: পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও অন্যদের আহত হওয়ার খবরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খন্দকার হাসান মাহমুদ, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন অবস্থায় কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার প্রস্তুতি: পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ হত্যা, অস্ত্র লুট, ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মামলায় কতজনকে আসামি করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা বসে ক্ষয়ক্ষতি দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
রক্ষা কমিটির অভিযোগ: আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারী জনতা সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলা করেনি। আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের লোকজন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গত রাতে সংবাদপত্র কার্যালয়ে পাঠানো রক্ষা কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়।
সাংসদের বক্তব্য: সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, এই হামলা ও আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধন রয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু