মত দ্বিমত- আস্থা কমে যাওয়া অশনিসংকেত by রাশেদা কে চৌধূরী

Tuesday, February 18, 2014

পিপিআরসি যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা খুবই প্রয়োজনীয় কাজ। তবে কোনো গবেষণাই পূর্ণাঙ্গ না। কোনো একটি গবেষণা থেকে সব প্রশ্নের উত্তরও আশা করা যায় না। সব গবেষণার কিছু শক্তিশালী দিক থাকে, কিছু সীমাবদ্ধতাও থাকে।
এখানে সেই শক্তির দিক যেমন আছে, তেমনি কিছু দুর্বলতাও নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। এ ধরনের গবেষণাকে জবাবদিহি নিশ্চিত করার একটা প্রয়াস হিসেবে দেখা যায়। মানুষ কী মনে করে সেই তথ্যগুলো আমাদের জানা দরকার; সেটা জানানো হয়েছে। এটা শুরু, ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এ ধরনের কাজ আরও হবে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থার অভাব জোরালোভাবে দেখা গেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি নতুন প্রজন্মের অনীহা জন্মানো একটা অশনিসংকেত। আমাদের কাজের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্যভাবে জানি যে এতে সত্যের প্রতিফলন ঘটেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন বা নৈরাজ্য বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে মানুষের আস্থা ধাক্কা খাবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ ধরনের অবস্থা বিরাজ করে অনেকের ধারণা। কিন্তু এ রকম অবস্থা দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দায়বদ্ধ, গণমুখী ও স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করলে যেকোনো কিছু করে পার পেয়ে যাওয়া বা পার করে দেওয়ার সংস্কৃতির অবসান হবে। এর জন্য যে অঙ্গীকার দরকার, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিক থেকেই আসতে হবে। আরেকটা বিপজ্জনক প্রবণতা হলো, দেশের চেয়ে দল বড় হয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তো শতকরা ৭০ ভাগের মতো মানুষের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দলীয় রাজনীতি প্রবেশ করানো হয়েছে।
বিচারব্যবস্থা নিয়ে বলার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। যে রীতি ও ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্য থেকে বেশি কিছু বলা যায় না। কিন্তু এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণের প্রয়োজন, তা এই গবেষণা থেকে উপলব্ধি করা যায়। র‌্যাবের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ বলা যায় না। অনেক ঘটনার তো খবরই হয় না। মোট ঘটনার শতকরা ২০ ভাগ যেখানে খবর হয়, সেখানে সুশাসন নিশ্চিত করার দরকারে সম্পূর্ণ চিত্রটা জানতে ও জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করায় এটা জরুরি। এই জবাবদিহি জনগণের কাছে, দলের কাছে না। তবে প্রতিবেদনে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করার সুপারিশ বিশেষ নেই।
জবাবদিহি নিশ্চিত করায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা থাকা দরকার ছিল। অথচ প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন নিজেই লুকোচুরি খেলছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তথ্য জানার অধিকার আমাদের আছে। ইসি যখন সেই তথ্য দিচ্ছে না বা দিতে চাইছে না, তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাজ করার ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে তথ্য অধিকার কমিশনেরও কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। এ ব্যাপারে আরও আলোকপাত করা দরকার।
পুলিশের বিষয়ে ক্রমাগতভাবে মানুষের আস্থা কমছে। এটা নতুন না, প্রতিটা দশকে এই আস্থা কমছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে, সরকারের চাপের কারণে দায়িত্ব পালনে বাধা পায়, সেই বিষয়টা গবেষণায় অনুপস্থিত। তাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্যও তারা যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। এর বাইরে ঢালাওভাবে দলীয় নিয়োগের ব্যাপার তো রয়েছেই। আমরা দেখেছি যে উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তারা দাগি আসামিকেও ছেড়ে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও দলীয়করণ গভীর হয়েছে। এসব বিষয় যখন জনগণের দৃষ্টির মধ্যে আসে, তখন তো তারা আস্থা হারাবেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকলাপ যেমন র‌্যাবের বিষয়ে, বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে আরও আলোকপাত করতে হবে। জনগণের
অর্থেই তারা প্রতিপালিত হয়। তাদের দোষ-ত্রুটির কথা যদি আরও আসত তাহলে জনগণও সচেতন হতো এবং র‌্যাব-পুলিশও হয়তো তাদের জবাবদিহির ঘাটতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারত। এ কারণে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক গবেষণার কথা ভাবা যেতে পারে।
ছাত্ররাজনীতির মধ্যে যে কলঙ্ক আমরা দেখতে পাই, সেটা নিরসনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাণী শুনি, কিন্তু সমাধানের কোনো ভূমিকায় তাঁরা নেই। সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করা হলেও আইনি শাস্তি হতে দেখছি না। বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা কিছুদিন পরে আবার দলে ফিরে আসেন। ভবিষ্যতে যে নেতারা আসবেন, তাঁদের চরিত্র তো আমরা ছাত্ররাজনীতির দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। এদিকেও আশা করার সুযোগ কম। সব ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে।
সুশীল সমাজের বিভিন্ন অংশ যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের মধ্যে থাকে, সেটা উঠে না আসা এই গবেষণার আরেকটি সীমাবদ্ধতা। প্রত্যক্ষভাবে তো গণমাধ্যম বন্ধই করে দেওয়া হয়, পরোক্ষভাবে নানা রকম চাপের কারণে মিডিয়া যে জবাবদিহির চাপ তৈরি করবে, সেটাও করতে ব্যর্থ হয়।
এ ধরনের গবেষণা মানুষের ধারণার ওপর ভিত্তি করে করা হয়। তারপরও এই প্রয়াসটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের গবেষণা চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।

কী ভাবছে নাগরিক সমাজ : সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক- দেশ বিপাকে পড়েছে by রাশেদা কে চৌধূরী

Sunday, January 5, 2014

কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের তিনটি শর্ত। তা হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। বর্তমান নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে প্রশ্ন আছে।
অতএব আমরা হতাশ। দ্বিতীয় হলো, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ১৫৩ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটারদের অধিকাংশই বঞ্চিত। এতে করে তাঁদের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে। এঁদের সংখ্যা কম নয়। এবার কয়েক লাখ নতুন ভোটার তাঁদের জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারলেন না। তৃতীয় হলো, একতরফা নির্বাচন যতবার হয়েছে, ততবারই ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে নির্বাচন এ দেশে হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। গত নির্বাচনেও ভোটারদের উপস্থিতিতে, বিশেষ করে নারী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এবারের পরিবেশের প্রধান চরিত্র হলো আতঙ্ক।

নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রাখায় শান্তি আসবে না। তারাও দেশবাসীকে শান্তি দেবে না। তাদেরও প্রশ্ন আছে, দাবি আছে। যখন প্রধান দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের অনাস্থা, সংঘাত ও সহিংসতা চলে, পারস্পরিক বিদ্বেষ প্রধান হয়ে ওঠে, তখন প্রতিক্রিয়াশীল চক্র রাজনীতির স্থান দখল করে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের আতিপাতি সব সন্ত্রাসীই এখন মাঠে। এটাই সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার। এই রাজনীতি আমাদের কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে আতঙ্কিত আছি।
দুঃখজনক যে ‘না’ ভোটের বিধানটাই উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মানুষ আছে বাংলাদেশে, যাঁরা এই সুযোগ থাকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের অনাস্থা প্রকাশ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়া আমার পছন্দ না, এই প্রার্থী আমার পছন্দ না, এখন সেটা জানানোরও সুযোগ নেই। জনগণ দুই রাজনৈতিক দলের বিবাদের মধ্যে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদদের মনে রাখা দরকার, জনগণ সুযোগ পেলেই কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ীকেও এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনতে পারে।
আমরা নিশ্চিতভাবেই বিপাকে ও বিপর্যয়ে পড়েছি। প্রধান দুই জোটের দ্বারাই এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান কোনো জোট যারা দেশে তিনবার নির্বাচিত হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনায় জনগণের মধ্যে দ্বিধা ও অনীহা চলে আসে। রাজনীতিবিদেরা কেন সমঝোতায় আসবেন না, তা বুঝতে পারছি না। যদি দলের চেয়ে দেশ বড় হয়, তাহলে সমঝোতা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তার জন্য ছাড় দুই পক্ষকেই দিতে হবে। সময় চলে গেছে, কিন্তু অপশক্তির হাতে দেশ চলে যাওয়ার আগেই তাদের উচিত সাড়া দেওয়া।
রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।

এমন হাস্যকর নির্বাচন মানুষ চায় না by রাশেদা কে চৌধূরী

Sunday, December 15, 2013

দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন একটি হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের প্রজ্ঞাবান রাজনীতিকেরা এটা কী করছেন, তা বুঝতে পারছি না! তবে একজন ভোটার হিসেবে আমি এমন নির্বাচন কখনোই চাই না।
দেশের কোনো সাধারণ মানুষই এ রকম নির্বাচন চায় বলেও মনে করি না।

ভোটারবিহীন নির্বাচনের মতো প্রার্থীবিহীন এই নির্বাচন রাজনীতিকদের জন্য মোটেই সম্মানজনক হবে না। তেমনি জনগণের জন্যও এই নির্বাচন কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। সর্বসাধারণের কাছেও এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই এ ধরনের নির্বাচনের ফলাফলকে জনগণের রায় বলা বা মেনে নেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ধরনের একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন সেই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দেশের সব অর্জনকে ম্লান করে দেবে। এ ধরনের নির্বাচন দেখে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরও বড় একটি আশঙ্কা জনমনে সৃষ্টি হয়েছে, তা হলো প্রধান বিরোধী দল ছাড়া এ ধরনের একটি নির্বাচন কি দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারবে? এখন যে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনের পর কি তার অবসান হবে? এটা শুধু আশঙ্কা নয়, জনমনের বিরাট বড় এক প্রশ্নও। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে যে পারস্পরিক দোষারোপ ও কাদা-ছোড়াছুড়ি এই নির্বাচনকে ঘিরে চলছে, তার সুযোগ নিয়ে আরেক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই শক্তি সাধারণ মানুষের জন্য এক আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সারা দেশে তারা জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করে চলেছে। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্রশক্তি তাদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রধান বিরোধী দলও তাদের ব্যাপারে চুপ। এটা জাতির জন্য মোটেই মর্যাদার বিষয় নয়।

-সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. News 2 Blog 24 - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু